পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোবিন্দ দাসের করচা واری\ সুতরাং চৈতন্যদেবের জটা হইয়াছিল এ কথাটা অনেক গোড়া বৈষ্ণবের ভাল লাগে নাই। করচাতে সন্ন্যাস গ্রহণের পাঁচ মাস পরে চৈতন্তের জটার উল্লেখ আছে। দীর্ঘকালের জন্ত পথ পৰ্য্যটন করিতে হইলে সন্ন্যাসীরা কৃত্রিম জটা ধারণ করিতেন এবং এখনও করিয়া থাকেন। তীর্থ যাত্রাকালে কেশ-মুণ্ডনের ব্যবস্থা নাই ( “প্রবাসে তীর্থ যাত্রায়াং মাতৃপিতৃ বিয়োগতঃ । কচানাং বপনং কাৰ্য্যং বৃথা ন বিকচে ভবেৎ”—প্রায়শ্চিত্ততত্ত্বম্) দীর্ঘ প্রবাস যাত্রার প্রাক্কালে জটাধারণের পদ্ধতি রামায়ণের পূর্ব সময় হইতে চলিয়া আসিয়াছে। স্বয়ং রামচন্দ্র বনযাত্রার প্রথম দিনেই জটাধারণ করিয়াছিলেন “এবমস্তু গমিষ্যামি বনং বস্তমহং ত্বিত: । জটাচীরধরে রাজ্ঞঃ প্রতিজ্ঞামমুপালয়ন।” কৃত্তিবাস রামের এই জটাধারণের কথা বিশেষ করিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। প্রবাসী লিখিতেছেন, এরূপ জটাধারণ ভওসন্ন্যাসীর কার্য্য। সুতরাং রামচন্দ্রও তাহার মতে ভও ছিলেন। তিনি লিখিয়াছেন “যে প্রভু ভণ্ডামীর উপর এত চট যে”—ইত্যাদি। রাম ক্ষত্রিয়, কিন্তু চৈতন্য ব্রাহ্মণ, এই যুক্তি অবলম্বন করিয়া তিনি রামের নজির অগ্রাহ করিয়াছেন। রামের সঙ্গে তুলনা করিতে যাইয়াও চৈতন্তদেবের বামনাই ফলাইতে হইবে । চরিতামৃত ও অন্যান্য গ্রন্থের বর্ণনা অনৈক্য চৈতন্তদেব ত্রিবাঙ্কুরে যাইয়া কতকটা দূরে অবস্থিত আদি কেশব ও জনাৰ্দ্দনের মন্দির দেখিলেন না কেন এবং “কর্ণামৃত সংগ্রহ না করিয়াই তিনি চলিয়া আসিলেন” এই হেতুবাদে কেহ কেহ করচাকে অপ্রামাণিক মনে করিয়াছেন। গোবিন্দ সামান্ত বাঙ্গাল জানিতেন। সংস্কৃত ত জানিতেনই না, এইজন্ত যেখানে পাণ্ডিত্যের কথা সেখানে তিনি মুক হইয়া থাকিতেন। রামরায়ের সঙ্গে চৈতন্য প্রভুর যে আলোচনা হইয়াছিল, তাহা শতাংশের এক অংশও তিনি লিখিতে পারেন নাই, এজন্ত দুঃখপ্রকাশ করিয়াছেন। কর্ণামৃত মহাপ্ৰভু সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, এই ক্ষুদ্র তত্ত্বও কি আমরা মুর্থ ভূত্যের নিকটে আশা করিতে পারি? কোন কোন তীর্থে যাইয়া কেন যে তিনি কোন কোন মন্দির দেখেন নাই তাহার কারণ আমরা তাহাকে পাইলে জিজ্ঞাসা করিতাম। না দেখিবার একশত একটা কারণ থাকিতে পারে। তিনি দাক্ষিণাত্যের সমস্ত দেবমন্দিরই দেখিয়াছিলেন, এরূপ কেহ কখন কি হলপ করিয়া বলিতে পারেন ? চৈতন্য চরিতামৃতের পূৰ্ব্ববর্ত “চৈতন্য চন্দ্রোদয়” ও “চৈতন্ত ভাগবত” প্রভৃতি গ্রন্থেও ত কর্ণামৃত সংগ্ৰহ, এবং আদি কেশব ও জনাৰ্দ্দনের মন্দির দেখার কথা নাই। সে সম্বন্ধে আপত্তি-কারক কি বলেন ? মহাপ্রভুর দ্বারকাধীশের মদির দেখার মত এত বড় একটা ধাও ত চরিতামৃতে নাই, ইহাতে আপত্তিকারক বিশ্বত হইয়াছেন, কিন্তু ইহা লইয়া বিশেষ কোন বাক্য ব্যয় করেন নাই।