পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 গোরা তাহার স্পষ্ট উত্তর না করিয়া কহিল, “বিনয়ের সঙ্গে শশিমুখীর বিয়ে হতে পারবে না।”

 মহিম। কেন! বিনয়ের মত নেই নাকি?

 গোরা। আমার মত নেই।

 মহিম হাত উল্‌টাইয়া কহিলেন, “বেশ! এ আবার একটা নতুন ফ্যাসাদ দেখছি। তোমার মত নেই। কারণটা কী শুনি।”

 গোরা। আমি বেশ বুঝেছি, বিনয়কে আমাদের সমাজে ধরে রাখা শক্ত হবে। ওর সঙ্গে আমাদের ঘরের মেয়ের বিবাহ চলবে না।

 মহিম। ঢের ঢের হিঁদুয়ানি দেখেছি, কিন্তু এমনটি আর কোথাও দেখলুম না। কাশী-ভাটপাড়া ছাড়িয়ে গেলে! তুমি যে দেখি, ভবিষ্যৎ দেখে বিধান দাও। কোন্ দিন বলবে, স্বপ্নে দেখলুম খৃস্টান হয়েছ, গোবর খেয়ে জাতে উঠতে হবে।

 অনেক বকাবকির পর মহিম কহিলেন, “মেয়েকে তো মূর্খর হাতে দিতে পারি নে। যে ছেলে লেখাপড়া শিখেছে, যার বুদ্ধিশুদ্ধি আছে, সে ছেলে মাঝে মাঝে শাস্ত্র ডিঙিয়ে চলবেই। সেজন্যে তার সঙ্গে তর্ক করে, তাকে গাল দাও- কিন্তু তার বিয়ে বন্ধ করে মাঝে থেকে আমার মেয়েটাকে শাস্তি দাও কেন! তোমাদের সমস্তই উল্‌টো বিচার।”

 মহিম নীচে আসিয়া আনন্দময়ীকে কহিলেন, “মা, তোমার গোরাকে তুমি ঠেকাও।”

 আনন্দময়ী উদ্‌বিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী হয়েছে?”

 মহিম। শশিমুখীর সঙ্গে বিনয়ের বিবাহ আমি একরকম পাকা করেই এনেছিলুম। গোরাকেও রাজি করেছিলুম, ইতিমধ্যে গোরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে, বিনয় যথেষ্ট পরিমাণে হিঁদু নয়- মনু-পরাশরের সঙ্গে তার মতের একটু-আধটু অনৈক্য হয়ে থাকে। তাই গোরা বেঁকে দাঁড়িয়েছে-গোরা বাঁকলে কেমন বাঁকে সে তো জানই। কলিযুগের জনক যদি পণ করতেন যে বাঁকা গোরাকে সোজা করলে তবে সীতা দেব, তবে শ্রীরামচন্দ্র

১০৩