পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বিনয়। আগে তো তুমি মন্দই বলতে! আমরা দুজনের কেউ বিয়ে করব না এ তো একরকম ঠিক হয়েই ছিল।

 গোরা। এখন ঠিক করা গেল তুমি বিয়ে করবে আর আমি করব না।

 বিনয়। কেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?

 গোরা। পৃথক ফল হবার ভয়েই এই ব্যবস্থা করা যাচ্ছে। বিধাতা কোনো কোনো মানুষকে সহজেই বেশি ভারগ্রস্ত করে গড়ে থাকেন, কেউ বা সহজেই দিব্য ভারহীন— এই উভয় জীবকে একত্রে জুড়ে চালাতে গেলে এদের একটির উপর বাইরে থেকে বোঝা চাপিয়ে দুজনের ওজন সমান করে নিতে হয়। তুমি বিবাহ করে একটু দায়গ্রস্ত হলে পর তোমার আমাতে সমান চালে চলতে পারব।

 বিনয় একটু হাসিল এবং কহিল, “যদি সেই মতলব হয় তবে এই দিকেই বাটখারাটি চাপাও।”

 গোরা। বাটখারাটি সম্বন্ধে আপত্তি নেই তো?

 বিনয়। ওজন সমান করবার জন্যে যা হাতের কাছে আসে তাতেই কাজ চালানো যেতে পারে। ও পাথর হলেও হয়, ঢেলা হলেও হয়, যা খুশি।

 গোরা যে বিবাহ-প্রস্তাবে কেন উৎসাহ প্রকাশ করিল তাহা বিনয়ের বুঝিতে বাকি রহিল না। পাছে বিনয় পরেশবাবুর পরিবারের মধ্যে বিবাহ করিয়া বসে গোরার মনে এই সন্দেহ হইয়াছে অনুমান করিয়া বিনয় মনে মনে হাসিল। এরূপ বিবাহের সংকল্প ও সম্ভাবনা তাহার মনে এক মুহূর্তের জন্যও উদিত হয় নাই। এ যে হইতেই পারে না। যাই হোক, শশিমুখীকে বিবাহ করিলে এরূপ অদ্ভুত আশঙ্কার একেবারে মূল উৎপাটিত হইয়া যাইবে এবং তাহা হইলেই উভয়ের বন্ধুত্বসম্বন্ধ পুনরায় সুস্থ ও শান্ত হইবে ও পরেশবাবুদের সঙ্গে মেলামেশা করিতেও তাহার কোনো দিক হইতে কোনো সংকোচের কারণ থাকিবে না, এই কথা চিন্তা করিয়া সে শশিমুখীর সহিত বিবাহে সহজেই সম্মতি দিল।

 মধ্যাহ্নে আহারান্তে রাত্রের নিদ্রার ঋণশোধ করিতে দিন কাটিয়া গেল।

১৩৩