নয়, গোরার সঙ্গে তাহার সম্বন্ধটা ললিতার এবং সম্ভবত এ বাড়ির অন্য মেয়েদের কাছে কিরূপ ভাবে প্রতিভাত হইয়াছে সে কথাটাও বার বার তাহার মনের মধ্যে তোলাপাড়া করিতে লাগিল।
তাহার পরে যেদিন বিনয়ের সঙ্গে দেখা হইল ললিতা যেন নিরীহ কৌতূহলের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করিল, “গৌরমোহনবাবুকে সেদিনকার সার্কাসের গল্প বলেছেন?
এ প্রশ্নের খোঁচা বিনয়কে গভীর করিয়া বাজিল— কেননা তাহাকে কর্ণমূল রক্তবর্ণ করিয়া বলিতে হইল, “না, এখনো বলা হয় নি।”
লাবণ্য আসিয়া ঘরে ঢুকিয়া কহিল, “বিনয়বাবু আসুন-না।”
ললিতা কহিল, “কোথায়? সার্কাসে নাকি?”
লাবণ্য কহিল, “বাঃ, আজ আবার সার্কাস কোথায়? আমি ডাকছি আমার রুমালের চার ধারে পেন্সিল দিয়ে একটা পাড় এঁকে দিতে— আমি সেলাই করব। বিনয়বাবু কী সুন্দর আঁকতে পারেন!"
লাবণ্য বিনয়কে ধরিয়া লইয়া গেল।
১৯
সকালবেলায় গোরা কাজ করিতেছিল। বিনয় খামকা আসিয়া অত্যন্ত খাপছাড়াভাবে কহিল, “সেদিন পরেশবাবুর মেয়েদের নিয়ে আমি সার্কাস দেখতে গিয়েছিলুম।”
গোরা লিখিতে লিখিতেই বলিল, “শুনেছি।”
বিনয় বিস্মিত হইয়া কহিল, “তুমি কার কাছে শুনলে?”
গোরা। অবিনাশের কাছে। সেও সেদিন সার্কাস দেখতে গিয়েছিল।
গোরা আর কিছু না বলিয়া লিখিতে লাগিল। গোরা এ খবরটা আগেই শুনিয়াছে, সেও আবার অবিনাশের কাছ হইতে শুনিয়াছে, সুতরাং তাহাতে বর্ণনা ও ব্যাখ্যার কোনো অভাব ঘটে নাই— ইহাতে
১৫১