পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহাকে দগ্ধ করিতে লাগিল; সে বার বার বলিল, “অন্যায়, অন্যায়, অন্যায়!"

 বেলা দুইটার সময় আনন্দময়ী সবে যখন আহার সারিয়া সেলাই লইয়া বসিয়াছেন এমন সময় বিনয় আসিয়া তাঁহার কাছে বসিল। আজ সকালবেলাকার কতকটা খবর তিনি মহিমের কাছ হইতে পাইয়াছিলেন। আহারের সময় গোরার মুখ দেখিয়াও তিনি বুঝিয়াছিলেন, একটা ঝড় হইয়া গেছে।

 বিনয় আসিয়াই কহিল, “মা, আমি অন্যায় করেছি। শশিমুখীর সঙ্গে বিবাহের কথা নিয়ে আমি আজ সকালে গোরাকে যা বলেছি তার কোনো মানে নেই।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তা হোক বিনয়—মনের মধ্যে কোনো একটা ব্যথা চাপতে গেলে ঐরকম করেই বেরিয়ে পড়ে। ও ভালোই হয়েছে। এ ঝগড়ার কথা দুদিন পরে তুমিও ভুলবে, গোরাও ভুলে যাবে।”

 বিনয়। কিন্তু, মা, শশিমুখীর সঙ্গে আমার বিবাহে কোনো আপত্তি নেই, সেই কথা আমি তোমাকে জানাতে এসেছি।

 আনন্দময়ী। বাছা, তাড়াতাড়ি ঝগড়া মেটাবার চেষ্টা করতে গিয়ে আবার একটা ঝঞ্ঝাটে পোড়ো না। বিবাহটা চিরকালের জিনিস, ঝগড়া দুদিনের।

 বিনয় কোনোমতেই শুনিল না। সে এ প্রস্তাব লইয়া এখনই গোরার কাছে যাইতে পারিল না। মহিমকে গিয়া জানাইল— বিবাহের প্রস্তাবে কোনো বিঘ্ন নাই—মাঘ মাসেই কার্য সম্পন্ন হইবে—খুড়ামহাশয়ের যাহাতে কোনো অমত না হয় সে ভার বিনয় নিজেই লইবে।

 মহিম কহিলেন, “পানপত্রটা হয়ে যাক-না।”

 বিনয় কহিল, “তা বেশ, সেটা গোরার সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন।”

 মহিম ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “আবার গোরার সঙ্গে পরামর্শ!"

 বিনয় কহিল, “না, তা না হলে চলবে না।”

১৫৭