পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভিমানের সময় নহে। গতকল্যকার ঝগড়ার প্রতিক্রিয়ার দ্বারাতেই যে বিবাহের কথাটা পাকা হইল, বিনয়ের বিদ্রোহই যে বিনয়ের বন্ধনকে দৃঢ় করিল, সে কথা মনে করিয়া গোরা কালিকার ঘটনায় মনে মনে খুশি হইল। বিনয়ের সঙ্গে তাহাদের চিরন্তন স্বাভাবিক সম্বন্ধ স্থাপন করিতে গোরা কিছুমাত্র বিলম্ব করিল না। কিন্তু এবার দুজনকার মাঝখানে তাহাদের একান্ত সহজ ভাবের একটুখানি ব্যতিক্রম ঘটিল।

 গোরা এবার বুঝিয়াছে দূর হইতে বিনয়কে টানিয়া রাখা শক্ত হইবে— বিপদের ক্ষেত্র যেখানে সেইখানেই পাহারা দেওয়া চাই। গোরা মনে ভাবিল, আমি যদি পরেশবাবুদের বাড়িতে সর্বদা যাতায়াত রাখি তাহা হইলে বিনয়কে ঠিক গণ্ডির মধ্যে ধরিয়া রাখিতে পারিব।

 সেই দিনই অর্থাৎ ঝগড়ার পরদিন অপরাহ্নে গোরা বিনয়ের বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল। আজই গোরা আসিবে বিনয় কোনোমতেই এমন আশা করে নাই। সেইজন্যই সে মনে মনে যেমন খুশি তেমনি আশ্চর্য হইয়া উঠিল।

 আরো আশ্চর্যের বিষয় গোরা পরেশবাবুদের মেয়েদের কথাই পাড়িল, অথচ তাহার মধ্যে কিছুমাত্র বিরূপতা ছিল না। এই আলোচনায় বিনয়কে উত্তেজিত করিয়া তুলিতে বেশি চেষ্টার প্রয়োজন করে না।

 সুচরিতার সঙ্গে বিনয় যে-সকল কথার আলোচনা করিয়াছে তাহা আজ সে বিস্তারিত করিয়া গোরাকে বলিতে লাগিল। সুচরিতা যে বিশেষ আগ্রহের সহিত এ-সকল প্রসঙ্গ আপনি উত্থাপিত করে এবং যতই তর্ক করুক-না কেন মনের অলক্ষ্য দেশে সে যে ক্রমশই অল্প অল্প করিয়া সায় দিতেছে, এ কথা জানাইয়া গোরাকে বিনয় উৎসাহিত করিবার চেষ্টা করিল।

 বিনয় গল্প করিতে করিতে কহিল, “নন্দর মা ভূতের ওঝা এনে নন্দকে কী করে মেরে ফেলেছে এবং তাই নিয়ে তোমার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল তাই যখন বলছিলুম তখন তিনি বললেন, “আপনারা মনে করেন ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে মেয়েদের রাঁধতে-বাড়তে আর ঘর নিকোতে দিলেই তাদের সমস্ত কর্তব্য হয়ে গেল। এক দিকে এমনি করে তাদের বুদ্ধিশুদ্ধি সমস্ত খাটো

১৫৯