পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলছেন?”

 বিনয় কিছু অপ্রতিভ হইয়া কহিল, “তবে তো ভুল বুঝেছি। সতীশবাবু, কার ফুল কাকে দিলে?”

 সতীশ উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিল, “বাঃ, ললিতাদিদি যে দিতে বললে!"

 বিনয়। কাকে দিতে বললেন?

 সতীশ। আপনাকে।

 ললিতা রক্তবর্ণ হইয়া উঠিয়া সতীশের পিঠে এক চাপড় মারিয়া কহিল, “তোর মতো বোকা তো আমি দেখি নি। বিনয়বাবুর ছবির বদলে তুই তাঁকে ফুল দিতে চাইলি নে?”

 সতীশ হতবুদ্ধি হইয়া কহিল, “হাঁ, তাই তো, কিন্তু তুমিই আমাকে দিতে বললে না?”

 সতীশের সঙ্গে তকরার করিতে গিয়া ললিতা আরো বেশি করিয়া জালে জড়াইয়া পড়িল। বিনয় স্পষ্ট বুঝিল ফুল দুটি ললিতাই দিয়াছে, কিন্তু বেনামিতেই কাজ করা তাহার অভিপ্রায় ছিল। বিনয় কহিল, “আপনার ফুলের দাবি আমি ছেড়েই দিচ্ছি, কিন্তু তাই বলে আমার এই ফুলের মধ্যে ভুল কিছুই নেই। আমাদের বিবাদনিষ্পত্তির শুভ উপলক্ষে এই ফুল কয়টি—"

 ললিতা মাথা নাড়িয়া কহিল, “আমাদের বিবাদই বা কী, আর তার নিষ্পত্তিই বা কিসের?”

 বিনয় কহিল, “একেবারে আগাগোড়া সমস্তই মায়া? বিবাদও ভুল, ফুলও তাই, নিষ্পত্তিও মিথ্যা? শুধু শুক্তিতে রজতভ্রম নয়, শুক্তিটা-সুদ্ধই ভ্রম? ঐ-যে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের বাড়িতে অভিনয়ের একটা কথা হচ্ছিল সেটা—"

 ললিতা কহিল, “সেটা ভ্রম নয়। কিন্তু তা নিয়ে ঝগড়া কিসের? আপনি কেন মনে করছেন আপনাকে এইটেতে রাজি করবার জন্যে আমি মস্ত একটা লড়াই বাধিয়ে দিয়েছি, আপনি সম্মত হওয়াতেই আমি কৃতার্থ

১৯০