পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দুত্তিন কাজ করলেই মেয়ে-কটার বিয়ে দেবার সম্বল করে নিয়ে তার পরে স্ত্রী-পুরুষে কাশীবাসী হব। আর ভালো লাগে না মশায়, এক-এক সময় ইচ্ছা হয় গলায় দড়ি দিয়ে মরি! যা হোক, আজ রাত্রে যাবেন কোথায়? এইখানেই আহারাদি করে শয়ন করবেন। ও দারোগা বেটার ছায়া মাড়াতেও হবে না, আপনার জন্যে সমস্ত আলাদা বন্দোবস্ত করে দেব।”

 গোরার ক্ষুধা সাধারণের অপেক্ষা অধিক— আজ প্রাতে ভালো করিয়া খাওয়াও হয় নাই— কিন্তু তাহার সর্বশরীর যেন জ্বলিতেছিল— সে কোনোমতেই এখানে থাকিতে পারিল না, কহিল, “আমার বিশেষ কাজ আছে।”

 মাধব কহিল, “তা, রসুন, একটা লণ্ঠন সঙ্গে দিই।”

 গোরা তাহার কোনো জবাব না করিয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেল।

 মাধব ঘরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “দাদা, ও লোকটা সদরে গেল। এইবেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটা লোক পাঠাও।”

 দারোগা কহিল, “কেন, কী করতে হবে?”

 মাধব কহিল, “আর কিছু নয়, একবার কেবল জানিয়ে আসুক, একজন ভদ্রলোক কোথা থেকে এসে সাক্ষী ভাঙাবার জন্যে চেষ্টা করে বেড়াচ্ছে।”


২৭

ম্যাজিস্ট্রেট ব্রাউন্‌লো সাহেব দিবাবসানে নদীর ধারের রাস্তায় পদব্রজে বেড়াইতেছেন, সঙ্গে হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে তাঁহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন।

 ব্রাউন্‌লো সাহেব গার্ড্‌ন-পার্টিতে মাঝে মাঝে বাঙালি ভদ্রলোকদিগকে তাঁহার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করিতেন। জিলার এন্‌ট্রেন্স স্কুলে প্রাইজ বিতরণ উপলক্ষে তিনিই সভাপতির কাজ করিতেন। কোনো সম্পন্ন লোকের

২২৪