তো জিব ফেটে গিয়ে রক্ত পড়বে তবু কথা বের হবে না।
সুচরিতা কহিল, “সে তো জানি বোন! কিন্তু নরকযন্ত্রণাও সইতে হয়। এখন আর কোনো উপায় নেই। আজকের দিন জীবনে আর কখনো ভুলতে পারব না।”
সুচরিতার এই বাধ্যতায় ললিতা রাগ করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল। মাকে আসিয়া কহিল, “মা, তোমরা যাবে না?”
বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তুই কি পাগল হয়েছিস? রাত্তির নটার পর যেতে হবে।”
ললিতা কহিল, “আমি কলকাতায় যাবার কথা বলছি।”
বরদাসুন্দরী। শোনো একবার মেয়ের কথা শোনো!
ললিতা সুধীরকে কহিল, “সুধীরদা, তুমিও এখানে থাকবে?”
গোরার শাস্তি সুধীরের মনকে বিকল করিয়া দিয়াছিল, কিন্তু বড়ো বড়ো সাহেবের সম্মুখে নিজের বিদ্যা প্রকাশ করিবার প্রলোভন সে ত্যাগ করিতে পারে এমন সাধ্য তাহার ছিল না। সে অব্যক্তস্বরে কী একটা বলিল— বোঝা গেল সে সংকোচ বোধ করিতেছে, কিন্তু সে থাকিয়াই যাইবে।
বরদাসুন্দরী কহিলেন, “গোলমালে বেলা হয়ে গেল। আর দেরি করলে চলবে না। এখন সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বিছানা থেকে কেউ উঠতে পারবে না— বিশ্রাম করতে হবে। নইলে ক্লান্ত হয়ে রাত্রে মুখ শুকিয়ে যাবে— দেখতে বিশ্রী হবে।”
এই বলিয়া তিনি জোর করিয়া সকলকে শয়নঘরে পুরিয়া বিছানায় শোওয়াইয়া দিলেন। সকলেই ঘুমাইয়া পড়িল, কেবল সুচরিতার ঘুম হইল না এবং অন্য ঘরে ললিতা তাহার বিছানার উপরে উঠিয়া বসিয়া রহিল।
স্টীমারে ঘন ঘন বাঁশি বাজিতে লাগিল।
স্টীমার যখন ছাড়িবার উপক্রম করিতেছে, খালাসিরা সিঁড়ি তুলিবার