পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

স্বাভাবিক হয়। নইলে কাজও চলে না, প্রাণও বাঁচে না। ব্রাহ্ম হয়ে বাহাদুরি করবার শখ যাদের আছে অব্রাহ্মরা তাদের সব কাজেই ভুল বুঝে নিন্দে করবে, এটুকু দুঃখ তাদের সহ্য করতেই হবে। তারাও বুক ফুলিয়ে বেড়াবে আর তাদের বিরুদ্ধ পক্ষও তাদের পিছন পিছন বাহবা দিয়ে চলবে, জগতে এটা ঘটে না, ঘটলেও জগতের সুবিধে হত না।”

 বিনয়। আমি দলের নিন্দের কথা বলছি নে— ব্যক্তিগত—

 গোরা। দলের নিন্দে আবার নিন্দে কিসের? সে তো মতামত-বিচার। ব্যক্তিগত নিন্দেই তো চাই। আচ্ছা, সাধুপুরুষ, তুমি নিন্দে করতে না?

 বিনয়। করতুম। খুবই করতুম, কিন্তু সেজন্যে আমি লজ্জিত আছি।

 গোরা তাহার ডান হাতের মুঠা শক্ত করিয়া কহিল, “না, বিনয়, এ চলবে না, কিছুতেই না।”

 বিনয় কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল; তার পরে কহিল, “কেন, কী হয়েছে। তোমার ভয় কিসের।”

 গোরা। আমি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি, তুমি নিজেকে দুর্বল করে ফেলছ।

 বিনয় ঈষৎ একটুখানি উত্তেজিত হইয়া কহিল, “দুর্বল! তুমি জান, আমি ইচ্ছে করলে এখনই তাদের বাড়ি যেতে পারি- তাঁরা আমাকে নিমন্ত্রণও করেছিলেন কিন্তু আমি যাই নি।”

 গোরা। কিন্তু এই-যে যাও নি, সেই কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছ না। দিনরাত্রি কেবল ভাবছ, 'যাই নি, যাই নি, আমি তাঁদের বাড়ি যাই নি’- এর চেয়ে যে যাওয়াই ভালো।

 বিনয়। তবে কি যেতেই বল।

 গোরা নিজের জানু চাপড়াইয়া কহিল, “না, আমি যেতে বলি নে। আমি তোমাকে লিখে পড়ে দিচ্ছি, যেদিন তুমি যাবে সেদিন একেবারে পুরোপুরিই যাবে। তার পরদিন থেকেই তাদের বাড়ি খানা খেতে শুরু করবে এবং ব্রাহ্মসমাজের খাতায় নাম লিখিয়ে একেবারে দিগ্‌বিজয়ী প্রচারক হয়ে উঠবে।

১৭