পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইয়া তাহার প্রতি আড়ি করিল।

 হারান পরেশবাবুর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই বলিয়া উঠিলেন, “একটা ভারি অন্যায় হয়ে গেছে।”

 পাশের ঘরে ললিতা ছিল, তাহার কানে কথাটা প্রবেশ করিবামাত্র সে আসিয়া তাহার বাবার চৌকির পৃষ্ঠদেশে দুই হাত রাখিয়া দাঁড়াইল এবং হারানবাবুর মুখের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল।

 পরেশবাবু কহিলেন, “আমি ললিতার কাছ থেকে সমস্ত সংবাদ শুনেছি। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে এখন আলোচনা করে কোনো ফল নেই।”

 হারান শান্ত সংযত পরেশকে নিতান্ত দুর্বলস্বভাব বলিয়া মনে করিতেন। তাই কিছু অবজ্ঞার ভাবে কহিলেন, “ঘটনা তো হয়ে চুকে যায়, কিন্তু চরিত্র যে থাকে, সেইজন্যেই যা হয়ে যায় তারও আলোচনার প্রয়োজন আছে। ললিতা আজ যে কাজটি করেছে তা কখনোই সম্ভব হত না যদি আপনার কাছে বরাবর প্রশ্রয় পেয়ে না আসত— আপনি ওর যে কতদূর অনিষ্ট করেছেন তা আজকের ব্যাপার সবটা শুনলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।”

 পরেশবাবু পিছন দিকে তাঁহার চৌকির গাত্রে একটা ঈষৎ আন্দোলন অনুভব করিয়া তাড়াতাড়ি ললিতাকে তাঁহার পাশে টানিয়া আনিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিলেন, এবং একটু হাসিয়া হারানকে কহিলেন, “পানুবাবু, যখন সময় আসবে তখন আপনি জানতে পারবেন, সন্তানকে মানুষ করতে স্নেহেরও প্রয়োজন হয়।”

 ললিতা এক হাতে তাহার পিতার গলা বেড়িয়া ধরিয়া নত হইয়া তাঁহার কানের কাছে মুখ আনিয়া কহিল, “বাবা, তোমার জল ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, তুমি নাইতে যাও।”

 পরেশবাবু হারানের প্রতি লক্ষ করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, “আর-একটু পরে যাব— তেমন বেলা হয় নি।”

 ললিতা স্নিগ্ধস্বরে কহিল, “না বাবা, তুমি স্নান করে এসো— ততক্ষণ পানুবাবুর কাছে আমরা আছি।”

২৬৭