পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 “কেন?”

 “ও ঘরে ওঁর ঠাকুর আছে।”

 “ঠাকুর আছে! তুমি বুঝি রোজ ঠাকুর পুজো কর।”

 হরিমোহিনী বলিলেন, “হাঁ মা, পুজো করি বৈকি।”

 “ঠাকুরকে তোমার ভক্তি হয়?”

 “পোড়া কপাল আমার! ভক্তি আর কই হল! ভক্তি হলে তো বেঁচেই যেতুম।”

 সেদিন ললিতা উপস্থিত ছিল। সে মুখ লাল করিয়া প্রশ্নকারিণীকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি যাঁর উপাসনা কর তাঁকে ভক্তি কর?”

 “বাঃ, ভক্তি করি নে তো কী!"

 ললিতা সবেগে মাথা নাড়িয়া কহিল, “ভক্তি তো করই না, আর ভক্তি যে কর না সেটা তোমার জানাও নেই।”

 সুচরিতা যাহাতে আচার-ব্যবহারে তাহার দল হইতে পৃথক না হয় সেজন্য হরিমোহিনী অনেক চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য হইতে পারিলেন না।

 ইতিপূর্বে হারানবাবুতে বরদাসুন্দরীতে ভিতরে ভিতরে একটা বিরোধের ভাবই ছিল। বর্তমান ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে খুব মিল হইল। বরদাসুন্দরী কহিলেন— যিনি যাই বলুন-না কেন, ব্রাহ্মসমাজের আদর্শকে বিশুদ্ধ রাখিবার জন্য যদি কাহারো দৃষ্টি থাকে তো সে পানুবাবুর। হারানবাবুও— ব্রাহ্মপরিবারকে সর্বপ্রকারে নিষ্কলঙ্ক রাখিবার প্রতি বরদাসুন্দরীর একান্ত বেদনাপূর্ণ সচেতনতাকে ব্রাহ্মগৃহিণীমাত্রেরই পক্ষে একটি সুদৃষ্টান্ত বলিয়া সকলের কাছে প্রকাশ করিলেন। তাঁহার এই প্রশংসার মধ্যে পরেশবাবুর প্রতি বিশেষ একটু খোঁচা ছিল।

 হারানবাবু একদিন পরেশবাবুর সম্মুখেই সুচরিতাকে কহিলেন, “শুনলুম নাকি আজকাল তুমি ঠাকুরের প্রসাদ খেতে আরম্ভ করেছ।”

 সুচরিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল, কিন্তু যেন সে কথাটা শুনিতেই পাইল

২০
৩০৫