পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তখন বিনয় বলবেন, যে রোদ পড়েছে। দেবতার উপর দোষ দিলে দেবতা তো কোনো জবাব করেন না— আসল মনের কথা অন্তর্যামীই জানেন।”

 বিনয় কহিল, “গোরা, তুমি কী বাজে বকছ।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তা সত্যি বাছা, অমন করে বলতে নেই। মানুষের মন কখনো ভালো থাকে, কখনো মন্দ থাকে, সব সময় কি সমান যায়। তা নিয়ে কথা পাড়তে গেলে উৎপাত করা হয়। তা আয় বিনু, আমার ঘরে আয়, তোর জন্যে খাবার ঠিক করেছি।”

 গোরা জোর করিয়া মাথা নাড়িয়া কহিল, “না মা, সে হচ্ছে না। তোমার ঘরে আমি বিনয়কে খেতে দেব না।”

 আনন্দময়ী। ইস, তাই তো! কেন বাপু, তোকে তো আমি কোনো দিন খেতে বলি নে— এ দিকে তোর বাপ তো ভয়ংকর শুদ্ধাচারী হয়ে উঠেছেন, স্বপাক না হলে খান না। বিনু আমার লক্ষ্মী ছেলে, তোর মতো ওর গোঁড়ামি নেই, তুই কেবল ওকে জোর করে ঠেকিয়ে রাখতে চাস।

 গোরা। সে কথা ঠিক, আমি জোর করেই ওকে ঠেকিয়ে রাখব। তোমার ওই খৃস্টান দাসী লছমিয়াটাকে না বিদায় করে দিলে তোমার ঘরে খাওয়া চলবে না।

 আনন্দময়ী। ওরে গোরা, অমন কথা তুই মুখে আনিস নে। চিরদিন ওর হাতে তুই খেয়েছিস, ও তোকে ছেলেবেলা থেকে মানুষ করেছে। এই সেদিন পর্যন্ত ওর হাতের তৈরি চাটনি না হলে তোর যে খাওয়া রুচত না। ছোটোবেলায় তোর যখন বসন্ত হয়েছিল লছমিয়া যে করে তোকে সেবা করে বাঁচিয়েছে সে আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না।

 গোরা। ওকে পেনশন দাও, জমি কিনে দাও, ঘর করে দাও, যা খুশি করে, কিন্তু ওকে রাখা চলবে না মা।

 আনন্দময়ী। গোরা, তুই মনে করিস, টাকা দিলেই সব ঋণ শোধ হয়ে যায়! ও জমিও চায় না, বাড়িও চায় না, তোক না দেখতে পেলে ও

২৩