পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হাতে নাই খেলি কিন্তু তোকে তো দু সন্ধে দেখতে পাব, সেই আমার ঢের। বিনয়, তুমি মুখটি অমন মলিন কোরো না বাপ। তোমার মনটি নরম, তুমি ভাবছ আমি দুঃখ পেলুম— কিছু না বাপ। আর-একদিন নিমন্ত্রণ করে খুব ভালো বামুনের হাতেই তোমাকে খাইয়ে দেব— তার ভাবনা কী। আমি কিন্তু বাছা, লছমিয়ার হাতের জল খাব, সে আমি সবাইকে বলে রাখছি।

 গোরার মা নীচে চলিয়া গেলেন। বিনয় চুপ করিয়া কিছুক্ষণ দাঁড়াইয়া রহিল; তাহার পর ধীরে ধীরে কহিল, “গোরা, এটা যেন একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।”

 গোরা। কার বাড়াবাড়ি।

 বিনয়। তোমার।

 গোরা। এক চুল বাড়াবাড়ি নয়। যেখানে যার সীমা আমি সেইটে ঠিক রক্ষে করে চলতে চাই। কোনো ছুতোয় সূচ্যগ্রভূমি ছাড়তে আরম্ভ করলে শেষকালে কিছুই বাকি থাকে না।

 বিনয়। কিন্তু, মা যে!

 গোর। মা কাকে বলে সে আমি জানি। আমাকে কি সে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে। আমার মার মতো মা ক’জনের আছে। কিন্তু আচার যদি না মানতে শুরু করি তবে একদিন হয়তো মাকেও মানব না। দেখো বিনয়, তোমাকে একটা কথা বলি, মনে রেখো, হৃদয় জিনিসটা অতি উত্তম কিন্তু সকলের চেয়ে উত্তম নয়।

 বিনয় কিছুক্ষণ পরে একটু ইতস্তত করিয়া বলিল, “দেখো গোরা, আজ মার কথা শুনে আমার মনের ভিতরে কিরকম একটা নাড়াচাড়া হচ্ছে। আমার বোধ হচ্ছে, যেন মার মনে কী একটা কথা আছে, সেইটে তিনি আমাদের বোঝাতে পারছেন না, তাই কষ্ট পাচ্ছেন।”

 গোরা অধীর হইয়া কহিল, “আঃ বিনয়, অত কল্পনা নিয়ে খেলিয়ো না— ওতে কেবলই সময় নষ্ট হয়, আর কোনো ফল হয় না।”

 বিনয়। তুমি পৃথিবীর কোনো জিনিসের দিকে কখনো ভালো করে

২৬