পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাহির হইয়া আসিতেছে। ললিতাকে দেখিয়া বিনয় মুহূর্তের জন্য থমকিয়া দাঁড়াইল— ললিতার সঙ্গে দুই-একটা কথা কহিয়া লইবে কি না সে সম্বন্ধে তাহার মনে একটা বিতর্ক উপস্থিত হইল— কিন্তু আত্মসংবরণ করিয়া ললিতার মুখের দিকে না চাহিয়া তাহাকে নমস্কার করিল ও মাথা হেঁট করিয়াই চলিয়া গেল।

 ললিতাকে যেন অগ্নিতপ্ত শেলে বিদ্ধ করিল। সে দ্রুতপদে বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই একেবারে তাহার ঘরে গেল। তাহার মা তখন টেবিলের উপর একটা লম্বা সরু খাতা খুলিয়া হিসাবে মনোনিবেশ করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন।

 ললিতার মুখ দেখিয়াই বরদাসুন্দরী মনে শঙ্কা গনিলেন। তাড়াতাড়ি হিসাবের খাতাটার মধ্যে একেবারে নিরুদ্দেশ হইয়া যাইবার প্রয়াস পাইলেন— যেন একটা কী অঙ্ক আছে যাহা এখনই মিলাইতে না পারিলে তাঁহার সংসার একেবারে ছারখার হইয়া যাইবে।

 ললিতা চৌকি টানিয়া টেবিলের কাছে বসিল। তবু বরদাসুন্দরী মুখ তুলিলেন না। ললিতা কহিল, “মা!"

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “রোস্‌ বাছা, আমি এই—"

 বলিয়া খাতাটার প্রতি নিতান্ত ঝুঁকিয়া পড়িলেন।

 ললিতা কহিল, “আমি বেশিক্ষণ তোমাকে বিরক্ত করব না। একটা কথা জানতে চাই। বিনয়বাবু এসেছিলেন?”

 বরদাসুন্দরী খাতা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিলেন, “হাঁ।”

 ললিতা। তাঁর সঙ্গে তোমার কী কথা হল?

 “সে অনেক কথা।”

 ললিতা। আমার সম্বন্ধে কথা হয়েছিল কি না?

 বরদাসুন্দরী পলায়নের পন্থা না দেখিয়া কলম ফেলিয়া খাতা হইতে মুখ তুলিয়া কহিলেন, “তা বাছা, হয়েছিল। দেখলুম যে ক্রমেই বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ছে— সমাজের লোকে চার দিকেই নিন্দে করছে, তাই সাবধান করে

৩৫৪