পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চলিল। ঘরের দ্বারের কাছে আসিয়া একটু ইতস্তত করিতেই সুচরিতা পূর্বের মতোই তাহার সহজ সৌহার্দ্যের স্নিগ্ধকণ্ঠে কহিল, “বিনয়বাবু, আসুন।”

 সেই স্বর শুনিয়া বিনয়ের মনে হইল যেন সে একটা অপ্রত্যাশিত ধন পাইল।

 বিনয় ঘরে ঢুকিলে সুচরিতা এবং ললিতা তাহাকে দেখিয়া আশ্চর্য হইল। সে যে কত অকস্মাৎ কী কঠিন আঘাত পাইয়াছে তাহা এই অল্প সময়ের মধ্যে তাহার মুখে চিহ্নিত হইয়া গিয়াছে। সে সরস শ্যামল ক্ষেত্রের উপর দিয়া হঠাৎ কোথা হইতে পঙ্গপাল পড়িয়া চলিয়া গিয়াছে বিনয়ের নিত্যসহাস্য মুখের সেই ক্ষেত্রের মতো চেহারা হইয়াছে। ললিতার মনে বেদনা এবং করুণার সঙ্গে একটু আনন্দের আভাসও দেখা দিল।

 অন্য দিন হইলে ললিতা সহসা বিনয়ের সঙ্গে কথা আরম্ভ করিত না— আজ যেমনি বিনয় ঘরে প্রবেশ করিল অমনি সে বলিয়া উঠিল, “বিনয়বাবু, আপনার সঙ্গে আমাদের একটা পরামর্শ আছে।”

 বিনয়ের বুকে কে যেন হঠাৎ একটা শব্দভেদী আনন্দের বাণ ছুঁড়িয়া মারিল। সে উল্লাসে চকিত হইয়া উঠিল। তাহার বিবর্ণ ম্লান মুখে মুহূর্তেই দীপ্তির সঞ্চার হইল।

 ললিতা কহিল, “আমরা কয় বোনে মিলে একটি ছোটোখাটো মেয়ে-ইস্কুল করতে চাই।”

 বিনয় উৎসাহিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “মেয়ে-ইস্কুল করা অনেক দিন থেকে আমার জীবনের একটা সংকল্প।”

 ললিতা কহিল, “আপনাকে এ বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে হবে।”

 বিনয় কহিল, “আমার দ্বারা যা হতে পারে তার কোনো ত্রুটি হবে না। আমাকে কী করতে হবে বলুন।”

 ললিতা কহিল, “আমরা ব্রাহ্ম বলে হিন্দু অভিভাবকেরা আমাদের বিশ্বাস করে না। এ বিষয়ে আপনাকে চেষ্টা দেখতে হবে।”

 বিনয় উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিয়া কহিল, “আপনি কিচ্ছু ভয় করবেন না— আমি পারব।”

৩৬৪