পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তা ও খুব পারবে। লোককে কথায় ভুলিয়ে বশ করতে ওর জুড়ি কেউ নেই।”

 ললিতা কহিল, “বিদ্যালয়ের কাজকর্ম যে নিয়মে যেরকম করে চালানো উচিত— সময় ভাগ করা, ক্লাস ভাগ করা, বই ঠিক করে দেওয়া, এ-সমস্তই আপনাকে করে দিতে হবে।”

 এ কাজটাও বিনয়ের পক্ষে শক্ত নহে, কিন্তু তাহার ধাঁধা লাগিয়া গেল। বরদাসুন্দরী তাঁহার মেয়েদের সহিত তাহাকে মিশিতে নিষেধ করিয়া দিয়াছেন এবং সমাজে তাহাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলিতেছে, এ কথাটা কি ললিতা একেবারেই জানে না? এ স্থলে বিনয় যদি ললিতার অনুরোধ রাখিতে প্রতিশ্রুত হয় তবে সেটা অন্যায় এবং ললিতার পক্ষে অনিষ্ঠকর হইবে কি না এই প্রশ্ন তাহাকে আঘাত করিতে লাগিল। এ দিকে ললিতা যদি কোনো শুভকর্মে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করে তবে সমস্ত চেষ্টা দিয়া সেই অনুরোধ পালন না করিবে এমন শক্তি বিনয়ের কোথায়?

 এ পক্ষে সুচরিতাও আশ্চর্য হইয়া গেছে। সে স্বপ্নেও মনে করে নাই ললিতা হঠাৎ এমন করিয়া বিনয়কে মেয়ে-ইস্কুলের জন্য অনুরোধ করিবে। একে তো বিনয়কে লইয়া যথেষ্ট জটিলতার সৃষ্টি হইয়াছে তাহার পরে এ আবার কী কাণ্ড! ললিতা জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছাপূর্বক এই ব্যাপারটি ঘটাইয়া তুলিতে উদ্যত হইয়াছে দেখিয়া সুচরিতা ভীত হইয়া উঠিল। ললিতার মনে বিদ্রোহ জাগিয়া উঠিয়াছে তাহা সে বুঝিল, কিন্তু বেচারা বিনয়কে এই উৎপাতের মধ্যে জড়িত করা কি তাহার উচিত হইতেছে? সুচরিতা উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিয়া উঠিল, “এ সম্বন্ধে একবার বাবার সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে তো। মেয়ে-ইস্কুলে ইন্‌সপেক্টারি পদ পেলেন বলে বিনয়বাবু এখনই যেন খুব বেশি আশান্বিত হয়ে না ওঠেন।”

 সুচরিতা কৌশলে প্রস্তাবটাকে যে বাধা দিল তাহা বিনয় বুঝিতে পারিল, ইহাতে তাহার মনে আরো খটকা বাজিল। বেশ বোঝা যাইতেছে, যে সংকট উপস্থিত হইয়াছে তাহা সুচরিতা জানে, সুতরাং নিশ্চয়ই তাহা ললিতার

৩৬৫