পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বামীকে প্রচুর অনুতাপ করিতে হইবে এই ভবিষ্যদ্‌বানী তিনি খুব জোরের সঙ্গে বার বার ঘোষণা করিয়াছিলেন, সেইজন্য সামাজিক আন্দোলনে পরেশবাবু যথেষ্ট বিচলিত হইতেছিলেন না দেখিয়া বরদাসুন্দরী মনে মনে অত্যন্ত অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছিলেন; হেনকালে সমস্ত সংকটের এমন সুচারুরূপে মীমাংসা হইয়া যাইবে ইহা বরদাসুন্দরীর কাছে বিশুদ্ধ প্রীতিকর হয় নাই। তিনি মুখ গম্ভীর করিয়া কহিলেন, “এই দীক্ষার প্রস্তাবটা আরকিছুদিন আগে যদি হত তা হলে আমাদের এত অপমান এত দুঃখ পেতে হত না।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “আমাদের দুঃখকষ্ট-অপমানের তো কোনো কথা হচ্ছে না, বিনয় দীক্ষা নিতে চাচ্ছেন।”

 বরদাসুন্দরী বলিয়া উঠিলেন, “শুধু দীক্ষা?”

 বিনয় কহিল, “অন্তর্যামী জানেন আপনাদের দুঃখ-অপমান সমস্তই আমার।”

 পরেশ কহিলেন, “দেখো বিনয়, তুমি ধর্মে দীক্ষা নিতে যে চাচ্ছ সেটাকে একটা অবান্তর বিষয় কোরো না। আমি তোমাকে পূর্বেও একদিন বলেছি, আমরা একটা কোনো সামাজিক সংকটে পড়েছি কল্পনা করে তুমি কোনো গুরুতর ব্যাপারে প্রবৃত্ত হোয়ো না।”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “সে তো ঠিক কথা। কিন্তু তাও বলি, আমাদের সকলকে জালে জড়িয়ে ফেলে চুপ করে বসে থাকাও ওঁর কর্তব্য নয়।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “চুপ করে না থেকে চঞ্চল হয়ে উঠলে জালে আরও বেশি করে গ্রন্থি পড়ে। কিছু-একটা করাকেই যে কর্তব্য বলে তা নয়, অনেক সময়ে কিছু না করাই হচ্ছে সকলের চেয়ে বড়ো কর্তব্য।”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তা হবে, আমি মুর্খ মানুষ, সব কথা ভালো বুঝতে পারি নে। এখন কী স্থির হল সেই কথাটা জেনে যেতে চাই-আমার অনেক কাজ আছে।”

 বিনয় কহিল, “পরশু রবিবারেই আমি দীক্ষা গ্রহণ করব। আমার

৪২৯