পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বসাইয়া দিল।

 বরদাসুন্দরী যখন বলিলেন “বিনয়, তুমি তো ব্রাহ্মসমাজের কাউকে জান; আমার হাতে একখানা চিঠি লিখে দাও, আমি কাল সকালেই নিজে গিয়ে সম্পাদক-মহাশয়কে দিয়ে সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেব, যাতে পরশু রবিবারেই তোমার দীক্ষা হয়ে যায়- তোমাকে আর-কিছুই ভাবতে হবে না”- তখন বিনয় কোনো কথাই বলিতে পারিল না। সে তাঁহার আদেশ অনুসারে একখানি চিঠি লিখিয়া বরদাসুন্দরীর হাতে দিয়া দিল। যাহা হউক একটা কোনো পথে এমন করিয়া বাহির হইয়া পড়া তাহার দরকার হইয়াছিল যে, ফিরিবার বা দ্বিধা করিবার কোনো উপায়মাত্র না থাকে।

 ললিতার সঙ্গে বিবাহের কথাটাও বরদাসুন্দরী একটুখানি পাড়িয়া রাখিলেন।

 বরদাসুন্দরী চলিয়া গেলে বিনয়ের মনে ভারি একটা যেন বিতৃষ্ণা বোধ হইতে লাগিল। এমন-কি, ললিতার স্মৃতিও তাহার মনের মধ্যে কেমন একটু বেসুরে বাজিতে লাগিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, যেন বরদাসুন্দরীর এই অশোভন ব্যস্ততার সঙ্গে ললিতারও একটা কোথাও যোগ আছে। নিজের প্রতি শ্রদ্ধাহ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে সকলেরই প্রতি তাহার শ্রদ্ধা যেন নামিয়া পড়িতে লাগিল।

 বরদাসুন্দরী বাড়ি ফিরিয়া আসিয়াই মনে করিলেন, ললিতাকে তিনি আজ খুশি করিয়া দিবেন। ললিতা যে বিনয়কে ভালোবাসে তাহা তিনি নিশ্চয় বুঝিয়াছিলেন। সেইজন্যই তাহাদের বিবাহ লইয়া সমাজে গোল বাধিয়াছিল। তখন তিনি নিজে ছাড়া আর-সকলকেই এজন্য অপরাধী করিয়াছিলেন। ললিতার সঙ্গে কয়দিন তিনি কথাবার্তা একরকম বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। সেইজন্য আজ যখন একটা কিনারা হইল সেটা যে অনেকটা তাঁহার জন্যই হইল এই গৌরবটুকু ললিতার কাছে প্রকাশ করিয়া তাহার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। ললিতার বাপ তো সমস্ত মাটি করিয়াই দিয়াছিলেন। ললিতা নিজেও তো বিনয়কে সিধা করিতে

৪৩৬