পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কষ্ট পেতে হয়েছে।”

 গোরা কহিল, “যেরকম আশা করা যায় তার চেয়ে বেশি কিছুই নয়।”

 হারানবাবু কহিলেন, “বিনয়বাবুর সম্বন্ধে আপনার সঙ্গে কিছু আলোচনা করবার আছে। আপনি বোধ হয় শুনেছেন, আগামী রবিবারে ব্রাহ্মসমাজে দীক্ষা নেবার জন্যে তিনি আয়োজন করেছেন।”

 গোরা কহিল, “না, আমি শুনি নি।”

 হারানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার এতে সম্মতি আছে?”

 গোরা কহিল, “বিনয় তো আমার সম্মতি চায় নি।”

 হারানবাবু কহিলেন, “আপনি কি মনে করেন বিনয়বাবু যথার্থ বিশ্বাসের সঙ্গে এই দীক্ষা গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়েছেন?”

 গোর কহিল, “যখন তিনি দীক্ষা নিতে রাজি হয়েছেন তখন আপনার এ প্রশ্ন সম্পূর্ণ অনাবশ্যক।”

 হারানবাবু কহিলেন, “প্রবৃত্তি যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন আমরা কী বিশ্বাস করি আর কী করি নে তা চিন্তা করে দেখবার অবসর পাই নে। আপনি তো মানবচরিত্র জানেন।”

 গোরা কহিল, “না। মানবচরিত্র নিয়ে আমি অনাবশ্যক আলোচনা করি নে।”

 হারানবাবু কহিলেন, “আপনার সঙ্গে আমার মতের এবং সমাজের মিল নেই, কিন্তু আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমি নিশ্চয় জানি, আপনার যা বিশ্বাস, সেটা সত্য হোক আর মিথ্যাই হোক, কোনো প্রলোভনে তার থেকে আপনাকে টলাতে পারবে না। কিন্তু—”

 গোরা বাধা দিয়া কহিল, “আমার প্রতি আপনার ওই-যে একটুখানি শ্রদ্ধা বাঁচিয়ে রেখেছেন তার এমনি কী মূল্য যে তার থেকে বঞ্চিত হওয়া বিনয়ের পক্ষে ভারী একটা ক্ষতি! সংসারে ভালো মন্দ বলে জিনিস অবশ্যই আছে, কিন্তু আপনার শ্রদ্ধা ও অশ্রদ্ধার দ্বারা যদি তার মূল্য নিরূপণ করেন তো করুন, তবে কিনা পৃথিবীর লোককে সেটা গ্রহণ করতে বলবেন না।”

৪৪৭