পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কথা নয়। তুই আমার কাছে কি কিছু ঢাকতে পারিস? আমি যে দেখতে পাচ্ছি, তুই আমার সঙ্গে তর্ক করবার ছুতো ধরে জোর করে আপনাকে ভোলাবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এতবড়ো গুরুতর ব্যাপারে ওরকম ফাঁকি চালাবার মৎলব করিস নে।”

 বিনয় মাথা নিচু করিয়া কহিল, “কিন্তু মা, আমি তো চিঠি লিখে কথা দিয়ে এসেছি, কাল আমি দীক্ষা নেব।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “সে হতে পারবে না। পরেশবাবুকে যদি বুঝিয়ে বলিস তিনি কখনোই পীড়াপীড়ি করবেন না।”

 বিনয় কহিল, “পরেশবাবুর এ দীক্ষায় কোনো উৎসাহ নেই, তিনি এ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তবে তোকে কিছু ভাবতে হবে না।”

 বিনয় কহিল, “না মা, কথা ঠিক হয়ে গেছে, এখন আর ফেরানো যাবে। কোনোমতেই না।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “গোরাকে বলেছিস?”

 বিনয় কহিল, “গোরার সঙ্গে আমার দেখা হয় নি।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “কেন- গোরা এখন বাড়িতে নেই?”

 বিনয় কহিল, “না, খবর পেলুম সে সুচরিতার বাড়িতে গেছে।”

 আনন্দময়ী বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “সেখানে তো সে কাল গিয়েছিল!”

 বিনয় কহিল, “আজও গেছে।”

 এমন সময় প্রাঙ্গণে পালকির বেহারার আওয়াজ পাওয়া গেল। আনন্দময়ীর কোনো কুটুম্ব স্ত্রীলোকের আগমন কল্পনা করিয়া বিনয় বাহিরে চলিয়া গেল।

 ললিতা আসিয়া আনন্দময়ীকে প্রণাম করিল। আজ আনন্দময়ী কোনোমতেই ললিতার আগমন প্রত্যাশা করেন নাই। তিনি বিস্মিত হইয়া ললিতার মুখের দিকে চাহিতেই বুঝিলেন, বিনয়ের দীক্ষা প্রভৃতি ব্যাপার লইয়া ললিতার একটা কোথাও সংকট উপস্থিত হইয়াছে, তাই সে তাঁহার কাছে আসিয়াছে।

৪৫৪