পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বিনয় পরেশের দিকে চাহিয়া কহিল, “শালগ্রাম আমি রাখব না।”

 পরেশ চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিলেন, “বিনয়, তোমরা সব কথা পরিষ্কার করে চিন্তা করে দেখছ না। তোমার একলার বা আ-কারও মতামত নিয়ে কথা হচ্ছে না। বিবাহ তো কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটা একটা সামাজিক কার্য, সে কথা ভুললে চলবে কেন? তোমরা কিছুদিন সময় নিয়ে ভেবে দেখো, এখনই মত স্থির করে ফেলো না।”

 এই বলিয়া পরেশ ঘর ছাড়িয়া বাগানে বাহির হইয়া গেলেন এবং সেখানে একলা পায়চারি করিতে লাগিলেন।

 ললিতাও ঘর হইতে বাহির হইবার উপক্রম করিয়া একটু থামিল এবং বিনয়ের দিকে পশ্চাৎ করিয়া কহিল, “আমাদের ইচ্ছা যদি অন্যায় ইচ্ছা না হয় এবং সে ইচ্ছ। যদি কোনো একটা সমাজের বিধানের সঙ্গে আগাগোড়া মিলে যায় তা হলেই আমাদের মাথা হেঁট করে ফিরে যেতে হবে, এ আমি কোনোমতেই বুঝতে পারি নে। সমাজে মিথ্যা ব্যবহারের স্থান আছে আর স্থান নেই ন্যায়সঙ্গত আচরণের?”

 বিনয় ধীরে ধীরে ললিতার কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “আমি কোনো সমাজকেই ভয় করি নে, আমরা দুজনে মিলে যদি সত্যকে আশ্রয় করি তা হলে আমাদের সমাজের তুল্য এতবড়ো সমাজ আর কোথায় পাওয়া যাবে।”

 বরদাসুন্দরী ঝড়ের মতো তাহাদের দুইজনার সম্মুখে আসিয়া কহিলেন, “বিনয়, শুনলুম নাকি তুমি দীক্ষা নেবে না?”

 বিনয় কহিল, “দীক্ষা আমি উপযুক্ত গুরুর কাছ থেকে নেব, কোনো সমাজের কাছ থেকে নেব না।”

 বরদাসুন্দরী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, “তোমাদের এ-সব ষড়যন্ত্র এ-সব প্রবঞ্চনার মানে কী! দীক্ষা নেব ভাণ করে এই দুদিন আমাকে আর ব্রাহ্মসমাজ-সুদ্ধ লোককে ভুলিয়ে কাণ্ডটা কী করলে বলো দেখি! ললিতার তুমি কী সর্বনাশ করতে বসেছ সে কথা একবার ভেবে দেখলে না?”

 ললিতা কহিল, “বিনয়বাবুর দীক্ষায় তোমাদের ব্রাহ্মসমাজের সকলের তো

৪৬৩