পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফেরাতে পারলে না? তা যাক, কিন্তু শশিমুখীর সঙ্গে ওর বিবাহের কথাটা নিয়ে কিছু বেশি গোলমাল হয়ে গেছে। এখন শশীর বিয়ে দিতে আর দেরি করলে চলবে না। জানই তো আমাদের সমাজের গতিক, যদি একটা মানুষকে কায়দায় পেলে তবে তাকে নাকের জলে চোখের জলে ক’রে ছাড়ে। তাই একটি পাত্র- না, তোমার ভয় নেই, তোমাকে ঘটকালি করতে হবে না। সে আমি নিজেই ঠিকঠাক করে নিয়েছি।”

 গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “পাত্রটি কে?”

 মহিম কহিলেন, “তোমাদের অবিনাশ।”

 গোরা কহিল, “সে রাজি হয়েছে?”

 মহিম কহিল, “রাজি হবে না! এ কি তোমার বিনয় পেয়েছ! না, যাই বলো, দেখা গেল তোমার দলের মধ্যে ওই অবিনাশ ছেলেটি তোমার ভক্ত বটে। তোমার পরিবারের সঙ্গে তার যোগ হবে এ কথা শুনে সে তো আহ্লাদে নেচে উঠল। বললে, ‘এ আমার ভাগ্য, এ আমার গৌরব।’ টাকাকড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলুম; সে অমনি কানে হাত দিয়ে বললে, ‘মাপ করবেন, ও-সব কথা আমাকে কিছুই বলবেন না। আমি বললুম, ‘আচ্ছা, সে-সব কথা তোমার বাবার সঙ্গে হবে।’ তার বাপের কাছেও গিয়েছিলুম। ছেলের সঙ্গে বাপের অনেক তফাত দেখা গেল। টাকার কথায় বাপ মোটেই কানে হাত দিলে না, বরঞ্চ এমনি আরম্ভ করলে যে আমারই কানে হাত ওঠবার জো হল। ছেলেটিও দেখলুম, এ-সকল বিষয়ে অত্যন্ত পিতৃভক্ত, একবারে ‘পিতা হি পরমং তপঃ’- তাকে মধ্যস্থ রেখে কোনো ফল হবে না। এবারে কোম্পানির কাগজটা না ভাঙিয়ে কাজ সারা হল। তা যাই হোক, তুমিও অবিনাশকে দুই-এক কথা বলে দিয়ে। তোমার মুখ থেকে উৎসাহ পেলে-”

 গোরা কহিল, “টাকার অঙ্ক তাতে কিছু কমবে না।”

 মহিম কহিলেন, “তা জানি- পিতৃভক্তিটা যখন কাজে লাগবার মতো হয় তখন সামলানো শক্ত।”

৪৮৩