পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 তখন ফুটন্ত তেলের মধ্যে অনেকখানি শাক তরকারি ছ্যাঁক্ ছ্যাঁক্ করিতেছিল এবং খোস্তা দিয়া সুচরিতা তাহাকে বিধিমতে নাড়া দিতেছিল; যখন হারানবাবু তাঁহার আহ্বানের ফল জানিবার জন্য চুপ করিলেন তখন সুচরিতা আগুনের উপর হইতে কড়া নীচে নামাইয়া মুখ ফিরাইল এবং দৃঢ়ম্বরে কহিল, “আমি হিন্দু।”

 হারানবাবু একেবারে হতবুদ্ধি হইয়া কহিলেন, “তুমি হিন্দু!”

 সুচরিতা কহিল, “হাঁ, আমি হিন্দু।”

 বলিয়া কড়া আবার উনানে চড়াইয়া সবেগে খোন্তা-চালনায় প্রবৃত্ত হইল।

 হারানবাবু ক্ষণকাল ধাক্কা সামলাইয়া লইয়া তীব্রস্বরে কহিলেন, “গৌরমোহনবাবু তাই বুঝি সকাল নেই সন্ধ্যা নেই তোমাকে দীক্ষা দিচ্ছিলেন?”

 সুচরিতা মুখ না ফিরাইয়াই কহিল, “হাঁ, আমি তাঁর কাছ থেকেই দীক্ষা নিয়েছি, তিনিই আমার গুরু।”

 হারানবাবু এক কালে নিজেকেই সুচরিতার গুরু বলিয়া জানিতেন। আজ যদি সুচরিতার কাছে তিনি শুনিতেন যে, সে গোরাকে ভালোবাসে তাহাতে তাঁহার তেমন কষ্ট হইত না কিন্তু তাঁহার গুরুর অধিকার আজ গোরা কাড়িয়া লইয়াছে, সুচরিতার মুখে এ কথা তাঁহাকে শেলের মতো বাজিল।

 তিনি কহিলেন, “তোমার গুরু যত বড়োলোকই হোন-না কেন, তুমি কি মনে কর হিন্দুসমাজ তোমাকে গ্রহণ করবে?”

 সুচরিতা কহিল, “সে কথা আমি বুঝি নে, আমি সমাজও জানি নে, আমি জানি আমি হিন্দু।”

 হারানবাবু কহিলেন, “তুমি জান এত দিন তুমি অবিবাহিত রয়েছ। কেবলমাত্র এতেই হিন্দুসমাজে তোমার জাত গিয়েছে?”

 সুচরিতা কহিল, “সে কথা নিয়ে আপনি বৃথা চিন্তা করবেন না, কিন্তু আমি আপনাকে বলছি আমি হিন্দু।”

 হারানবাবু কহিলেন, “পরেশবাবুর কাছে যে ধর্মশিক্ষা পেয়েছিলে

৩২
৪৯৭