পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 গোরা। সে তো ঠিক। কিন্তু, আমি যখন হিন্দু হয়ে জন্মেছি তখন তো সিংহদ্বার পার হয়ে এসেছি। এখন ঠিকমত সাধন করে গেলেই অল্পে অল্পে এগোতে পারব।

 কৃষ্ণদয়াল। বাবা, তর্কে তোমাকে ঠিকটি বোঝাতে পারব না, তবে তুমি যা বলছ সেও সত্য। যার যেটা কর্মফল, নির্দিষ্ট ধর্ম, তাকে একদিন ঘুরে ফিরে সেই ধর্মের পথেই আসতে হবে- কেউ আটকাতে পারবে না। ভগবানের ইচ্ছে। আমরা কী করতে পারি। আমরা তো উপলক্ষ।

 কর্মফল এবং ভগবানের ইচ্ছা, সোহহংবাদ এবং ভক্তিতত্ত্ব, সমস্তই কৃষ্ণদয়াল সম্পূর্ণ সমান ভাবে গ্রহণ করেন। পরস্পরের মধ্যে যে কোনো- প্রকার সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে তাহা অনুভবমাত্র করেন না।

আজ আহ্নিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেক দিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারি দিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিক্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন।

 আনন্দময়ী কহিলেন, “ওগো, তুমি তো তপস্যা করছ, ঘরের কথা কিছু ভাব না, কিন্তু আমি যে গোরার জন্যে সর্বদাই ভয়ে ভয়ে গেলুম।”

 কৃষ্ণদয়াল। কেন, ভয় কিসের।

 আনন্দময়ী। তা আমি ঠিক বলতে পারি নে। কিন্তু, আমার যেন মনে হচ্ছে, গোরা আজকাল এই-যে হিঁদুয়ানি আরম্ভ করেছে এ ওকে কখনোই সইবে না, এ ভাবে চলতে গেলে শেষকালে একটা কী বিপদ ঘটবে। আমি তো তোমাকে তখনই বলেছিলুম, ওর পইতে দিয়ো না। তখন যে তুমি কিছুই মানতে না; বললে, গলায় একগাছা সুতো পরিয়ে দিলে তাতে কারও কিছু আসে যায় না। কিন্তু, শুধু তো সুতো নয়, এখন ওকে ঠেকাবে কোথায়।

৪১