পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অত্যন্ত একটি সত্য পথ চাহিতেছে, এ-সমস্ত কিছুই তাহার ভালো লাগিতেছে না।

 এ দিকে প্রায়শ্চিত্তসভার আয়োজন চলিতেছে। এই আয়োজনে গোরা একটু বিশেষ উৎসাহ বোধ করিয়াছে। এই প্রায়শ্চিত্ত কেবল জেলখানার অশুচিতার প্রায়শ্চিত্ত নহে, এই প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা সকল দিকেই সম্পূর্ণ নির্মল হইয়া আবার একবার যেন নৃতন দেহ লইয়া সে আপনার কর্মক্ষেত্রে নবজন্ম লাভ করিতে চায়। প্রায়শ্চিত্তের বিধান লওয়া হইয়াছে, দিনস্থিরও হইয়া গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গে বিখ্যাত অধ্যাপক-পণ্ডিতদিগকে নিমন্ত্রণপত্র দিবার উদ্‌যোগ চলিতেছে- গোরার দলে ধনী যাহারা ছিল তাহারা টাকাও সংগ্রহ করিয়া তুলিয়াছে। দলের লোকে সকলেই মনে করিতেছে দেশে অনেক দিন পরে একটা কাজের মতো কাজ হইতেছে। অবিনাশ গোপনে আপন সম্প্রদায়ের সকলের সঙ্গে পরামর্শ করিয়াছে, সেইদিন সভায় সমস্ত পণ্ডিতদিগকে দিয়া গোরাকে ধান্যদূর্বা ফুলচন্দন প্রভৃতি বিবিধ উপচারে ‘হিন্দুধর্মপ্রদীপ’ উপাধি দেওয়া হইবে। এই সম্বন্ধে সংস্কৃত কয়েকটি শ্লোক লিখিয়া, তাহার নিম্নে সমস্ত ব্রাহ্মণপণ্ডিতের নামস্বাক্ষর করাইয়া, সোনার জলের কালীতে ছাপাইয়া, চন্দনকাঠের বাক্সের মধ্যে রাখিয়া তাহাকে উপহার দিতে হইবে। সেই সঙ্গে ম্যাক্‌স্‌মূলরের দ্বারা প্রকাশিত একখণ্ড ঋগ্‌বেদ-গ্রন্থ বহুমূল্য মরক্কো চামড়ায় বাঁধাইয়া, সকলের চেয়ে প্রাচীন ও মান্য অধ্যাপকের হাত দিয়া তাহাকে ভারতবর্ষের আশীর্বাদীস্বরূপ দান করা হইবে- ইহাতে আধুনিক ধর্মভ্রষ্টতার দিনে গোরাই যে সনাতন বেদবিহিত ধর্মের যথার্থ রক্ষাকর্তা এই ভাবটি অতি সুন্দররূপে প্রকাশিত হইবে।

 এইরূপে সেদিনকার কর্মপ্রণালীকে অত্যন্ত হৃদ্য এবং ফলপ্রদ করিয়া তুলিবার জন্য গোরার অগোচরে তাহার দলের লোকের মধ্যে প্রত্যহই মন্ত্রণা চলিতে লাগিল।

৫১১