পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

এলুম মা- তুমি ছাড়া আর কাউকে দেখি নে। বিনয় বলছিল, ‘বিয়ে আমার বাসাতেই হবে।’ আমি বললুম, ‘সে কিছুতেই হবে না- তুমি মস্ত নবাব হয়েছ কিনা, আমাদের মেয়ে অমনি সেধে গিয়ে তোমার ঘরে এসে বিয়ে করে যাবে!’ সে হবে না। আমি একটা বাসা ঠিক করেছি, সে তোমাদের এ বাড়ি থেকে বেশি দূর হবে না। আমি এইমাত্র সেখান থেকে আসছি। পরেশবাবুকে বলে তুমি রাজি করিয়ে নিয়ো।”

 সুচরিতা কহিল, “বাবা রাজি হবেন।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তার পরে, তোমাকেও মা, সেখানে যেতে হচ্ছে। এই তো সোমবারে বিয়ে। এই ক’দিন সেখানে থেকে আমাদের তো সমস্ত গুছিয়ে-গাছিয়ে নিতে হবে। সময় তো বেশি নেই। আমি একলাই সমস্ত করে নিতে পারি, কিন্তু তুমি এতে না থাকলে বিনয়ের ভারী কষ্ট হবে। সে মুখ ফুটে তোমাকে অনুরোধ করতে পারছে না, এমনকি আমার কাছেও সে তোমার নাম করে নি- তাতেই আমি বুঝতে পারছি, ওখানে তার খুব একটা ব্যথা আছে। তুমি কিন্তু সরে থাকলে চলবে না মা- ললিতাকেও সে বড়ো বাজবে।”

 সুচরিতা একটু বিস্মিত হইয়া কহিল, “মা, তুমি এই বিয়েতে যোগ দিতে পারবে?”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “বল কী সুচরিতা! যোগ দেওয়া কী বলছ! আমি কি বাইরের লোক যে শুধু কেবল যোগ দেব। এ যে বিনয়ের বিয়ে। এ তো আমাকেই সমস্ত করতে হবে। আমি কিন্তু বিনয়কে বলে রেখেছি, এ বিয়েতে আমি তোমার কেউ নয়, আমি কন্যাপক্ষে’- আমার ঘরে সে ললিতাকে বিয়ে করতে আসছে।”

 মা থাকিতেও শুভকর্মে ললিতাকে তাহার মা পরিত্যাগ করিয়াছেন, সে করুণায় আনন্দময়ীর হৃদয় পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে। সে কারণেই এই বিবাহে যাহাতে কোনো অনাদর-অশ্রদ্ধার লক্ষণ না থাকে সেইজন্য তিনি একান্তমনে চেষ্টা করিতেছেন। তিনি ললিতার মায়ের স্থান লইয়া নিজের হাতে

৫৩১