বসিয়া গেছেন। উপরের ঘরে বানান সমেত ইংরাজি শব্দ ও তাহার বাংলা প্রতিশব্দ মুখস্থ করার উপলক্ষে সতীশের কণ্ঠস্বরে সমস্ত পাড়া সচকিত হইয়া উঠিয়াছে। বাড়িতে তাহার গলার এত জোর অনুভব করা যাইত না-কিন্তু এখানে সে যে তাহার পড়াশুনায় কিছুমাত্র অবহেলা করিতেছে না ইহাই নিঃসংশয়ে প্রমাণ করিবার জন্য তাহাকে অনেকটা উদ্যম তাহার কণ্ঠস্বরে অনাবশ্যক প্রয়োগ করিতে হইতেছে।
হরিমোহিনীকে আনন্দময়ী বিশেষ সমাদরের সহিত অভ্যর্থনা করিলেন। সে-সমস্ত শিষ্টাচারের প্রতি মনোযোগ না করিয়া তিনি একেবারেই কহিলেন, “আমি রাধারানীকে নিতে এসেছি।”
আনন্দময়ী কহিলেন, “তা, বেশ তো, নিয়ে যাবে- একটু বোসো।”
হরিমোহিনী কহিলেন, “না, আমার পূজা-আর্চা সমস্তই পড়ে রয়েছে, আমার আহ্নিক সারা হয় নি, আমি এখন এখানে বসতে পারব না।”
সুচরিতা কোনো কথা না কহিয়া অলাবুচ্ছেদনে নিযুক্ত ছিল। হরিমোহিনী তাহাকেই সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “শুনছ? বেলা হয়ে গেল।”
ললিতা এবং আনন্দময়ী নীরবে বসিয়া রহিলেন। সুচরিতা তাহার কাজ রাখিয়া উঠিয়া পড়িল এবং কহিল, “মাসি, এসো।”
হরিমোহিনী পালকির অভিমুখে যাইবার উপক্রম করিলে সুচরিতা তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “এসো, একবার এ ঘরে এসো।”
ঘরের মধ্যে লইয়া গিয়া সুচরিতা দৃঢ়স্বরে কহিল, “তুমি যখন আমাকে নিতে এসেছ তখন সকল লোকের সামনেই তোমাকে অমনি ফিরিয়ে দেব না; আমি তোমার সঙ্গেই যাচ্ছি, কিন্তু আজ দুপুরবেলাই আমি এখানে আবার ফিরে আসব।”
হরিমোহিনী বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “এ আবার কেমন কথা! তা হলে বলোনা কেন, এইখানেই চিরকাল থাকবে।”
সুচরিতা কহিল, “চিরকাল তো থাকতে পাব না। সেইজন্যই যতদিন ওঁর কাছে থাকতে পাই, আমি ওঁকে ছাড়ব না।”
৫৫৫