পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

দরকার কী?”

 গোরার মতো আচারনিষ্ঠ ব্রাহ্মণের পক্ষেও ঠাকুরঘরে প্রবেশ করিলে অপরাধ হয়, এ কথা কৃষ্ণদয়ালের মতো লোকের মুখে নিতান্ত অসংগত শুনাইল না। সুতরাং গোরা ইহা সহ্য করিয়া গেল, কিছুই বলিল না।

 তখন কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “আর-একটা কথা শুনছি গোরা। তুমি নাকি প্রায়শ্চিত্ত করবার জন্যে সব পণ্ডিতদের ডেকেছ?”

 গোরা কহিল, “হাঁ।”

 কৃষ্ণদয়াল অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “আমি বেঁচে থাকতে এ কোনোমতেই হতে দেব না।”

 গোরার মন বিদ্রোহী হইয়া উঠিবার উপক্রম করিল; সে কহিল, “কেন?”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “কেন কী! আমি তোমাকে আর-একদিন বলেছি, প্রায়শ্চিত্ত হতে পারবে না।”

 গোরা কহিল, “বলে তো ছিলেন, কিন্তু কারণ তো কিছু দেখান নি।”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “কারণ দেখাবার আমি কোনো দরকার দেখি নে। আমরা তো তোমার গুরুজন, মান্যব্যক্তি; এ-সমস্ত শাস্ত্রীয় ক্রিয়াকর্ম আমাদের অনুমতি ব্যতীত করবার বিধিই নেই। ওতে যে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করতে হয়, তা জানো?”

 গোরা বিস্মিত হইয়া কহিল, “তাতে বাধা কী?”

 কৃষ্ণদয়াল ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “সম্পূর্ণ বাধা আছে। সে আমি হতে দিতে পারব না।”

 গোরা হৃদয়ে আঘাত পাইয়া কহিল, “দেখুন, এ আমার নিজের কাজ। আমি নিজের শুচিতার জন্যই এই আয়োজন করছি—এ নিয়ে বৃথা আলোচনা করে আপনি কেন কষ্ট পাচ্ছেন!”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “দেখো গোরা, তুমি সকল কথায় কেবল তর্ক করতে যেয়ো না। এ-সমস্ত তর্কের বিষয়ই নয়। এমন ঢের জিনিস আছে যা এখনো তোমার বোঝবার সাধ্য নেই। আমি তোমাকে ফের বলে যাচ্ছি-

৫৬৭