পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

উঠিয়া বলিলেন, “আমাদের আটাত্তর নম্বরের বাড়িটা এখান থেকে বরাবর ডান-হাতি গিয়ে—”

 সতীশ কহিল, “উনি আমাদের বাড়ি জানেন। উনি যে সেদিন আমার সঙ্গে বরাবর আমাদের দরজা পর্যন্ত গিয়েছিলেন।”

 এ কথায় লজ্জা পাইবার কোনোই প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু বিনয় মনে মনে লজ্জিত হইয়া উঠিল। যেন কী-একটা তাহার ধরা পড়িয়া গেল।

 বৃদ্ধ কহিলেন, “তবে তো আপনি আমাদের বাড়ি জানেন। তা হলে যদি কখনো আপনার—”

 বিনয়। সে আর বলতে হবে না— যখনই—

 পরেশ। আমাদের এ তো একই পাড়া, কেবল কলকাতা বলেই এতদিন চেনাশোনা হয় নি।

 বিনয় রাস্তা পর্যন্ত পরেশকে পৌঁছাইয়া দিল। দ্বারের কাছে কিছুক্ষণ সে দাড়াইয়া রহিল। পরেশ লাঠি লইয়া ধীরে ধীরে চলিলেন, আর সতীশ ক্রমাগত বকিতে বকিতে তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

 বিনয় মনে মনে বলিতে লাগিল, ‘পরেশবাবুর মতো এমন বৃদ্ধ দেখি নাই, পায়ের ধুলা লইতে ইচ্ছা করে। আর, সতীশ ছেলেটি কী চমৎকার। বাঁচিয়া থাকিলে এ একজন মানুষ হইবে— যেমন বুদ্ধি, তেমনি সরলতা।’

 এই বৃদ্ধ এবং বালকটি যতই ভালো হোক, এত অল্পক্ষণের পরিচয়ে তাহাদের সম্বন্ধে এতটা পরিমাণে ভক্তি ও স্নেহের উচ্ছ্বাস সাধারণত সম্ভবপর হইতে পারিত না। কিন্তু, বিনয়ের মনটা এমন অবস্থায় ছিল যে, সে অধিক পরিচয়ের অপেক্ষা রাখে নাই।

 তাহার পরে বিনয় মনে মনে ভাবিতে লাগিল, ‘পরেশবাবুর বাড়িতে যাইতেই হইবে, নহিলে ভদ্রতা রক্ষা হইবে না।’

 কিন্তু, গোরার মুখ দিয়া তাহাদের দলের ভারতবর্ষ তাহাকে বলিতে লাগিল, ‘ওখানে তোমার যাতায়াত চলিবে না। খবরদার!’

 বিনয় পদে পদে তাহাদের দলের ভারতবর্ষের অনেক নিষেধ মানিয়াছে।

৪৮