পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হইতেই তাহাকে ঠেলিয়া সরাইয়া ফেলিবার চেষ্টা করিতেছে। নিজের একাকিত্ব তাহাকে আজ অত্যন্ত একটা বৃহৎ কলেবর ধরিয়া দেখা দিল। তাহার সম্মুখে কর্মক্ষেত্র অতি বিস্তীর্ণ, কাজও অতি প্রকাণ্ড, কিন্তু তাহার পাশে কেহই দাঁড়াইয়া নাই।


৭৩

কাল প্রায়শ্চিত্তসভা বসিবে, আজ রাত্রি হইতেই গোরা বাগানে গিয়া বাস করিবে এইরূপ স্থির আছে। যখন সে যাত্রা করিবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় হরিমোহিনী আসিয়া উপস্থিত। তাঁহাকে দেখিয়া গোরা প্রসন্নতা অনুভব করিল না। গোরা কহিল, “আপনি এসেছেন- আমাকে যে এখনই বেরতে হবে- মাও তো কয়েক দিন বাড়িতে নেই। যদি তাঁর সঙ্গে প্রয়োজন থাকে তা হলে-”।

 হরিমোহিনী কহিলেন, “না বাবা, আমি তোমার কাছেই এসেছি। একটু তোমাকে বসতেই হবে, বেশিক্ষণ না।”

 গোরা বসিল। হরিমোহিনী সুচরিতার কথা পাড়িলেন। কহিলেন, গোরার শিক্ষাগুণে তাহার বিস্তর উপকার হইয়াছে। এমন-কি সে আজকাল যার-তার হাতের ছোঁওয়া জল খায় না, এবং সকল দিকেই তাহার সুমতি জন্মিয়াছে।— “বাবা, ওর জন্যে কি আমার কম ভাবনা ছিল। ওকে তুমি পথে এনে আমার কী উপকার করেছ সে আমি তোমাকে এক মুখে বলতে পারি নে। ভগবান তোমাকে রাজরাজেশ্বর করুন। তোমার কুলমানের যোগ্য একটি লক্ষ্মী মেয়ে ভালো ঘর থেকে বিয়ে করে আনো, তোমার ঘর উজ্জ্বল হোক, ধনে পুত্রে লক্ষ্মীলাভ হোক।”

 তাহার পরে কথা পাড়িলেন, সুচরিতার বয়স হইয়াছে, বিবাহ করিতে তাহার এক মুহূর্ত বিলম্ব করা উচিত নয়, হিন্দুঘরে থাকিলে, এতদিনে সন্তানের দ্বারা তাহার কোল ভরিয়া উঠিত। বিবাহে বিলম্ব করায় যে কতবড়ো অবৈধ

৫৭০