পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আল্‌মারি, তাহার উপরের থাকে থিয়োডোর পার্কারের বই সারি সারি সাজানো রহিয়াছে দেখা যাইতেছে। আল্‌মারির মাথার উপরে একটি গ্লোব কাপড় দিয়া ঢাকা রহিয়াছে।

 বিনয় বসিল। তাহার বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ড ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল; মনে হইতে লাগিল, তাহার পিঠের দিকের খোলা দরজা দিয়া যদি কেহ ঘরের ভিতরে আসিয়া প্রবেশ করে।

 পরেশ কহিলেন, “সোমবারে সুচরিতা আমার একটি বন্ধুর মেয়েকে পড়াতে যায়; সেখানে সতীশের একটি সমবয়সি ছেলে আছে, তাই সতীশও তার সঙ্গে গেছে। আমি তাদের সেখানে পৌছে দিয়ে ফিরে আসছি। আর একটু দেরি হলেই তো আপনার সঙ্গে দেখা হত না।”

 খবরটা শুনিয়া বিনয় একই কালে একটা আশাভঙ্গের খোঁচা এবং আরাম মনের মধ্যে অনুভব করিল। পরেশের সঙ্গে তাহার কথাবার্তা দিব্য সহজ হইয়া আসিল।

 গল্প করিতে করিতে একে একে পরেশ আজ বিনয়ের সমস্ত খবর জানিতে পারিলেন। বিনয়ের বাপ-মা নাই; খুড়িমাকে লইয়া খুড়া দেশে থাকিয়া বিষয়কৰ্ম দেখেন। তাহার খুড়তুতো দুই ভাই তাহার সঙ্গে এক বাসায় থাকিয়া পড়াশুনা করিত; বড়োটি উকিল হইয়া তাহাদের জেলা কোর্টে ব্যবসায় চালাইতেছে, ছোটোটি কলিকাতায় থাকিতেই ওলাউঠা হইয়া মারা গিয়াছে। খুড়ার ইচ্ছা, বিনয় ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটির চেষ্টা করে, কিন্তু বিনয় কোনো চেষ্টাই না করিয়া নানা বাজে কাজে নিযুক্ত আছে।

 এমনি করিয়া প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়া গেল। বিনা প্রয়োজনে আর বেশিক্ষণ থাকিলে অভদ্রতা হয়, তাই বিনয় উঠিয়া পড়িল; কহিল, “বন্ধু সতীশের সঙ্গে আমার দেখা হল না, দুঃখ রইল; তাকে খবর দেবেন, আমি এসেছিলুম।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “আর-একটু বসলেই তাদের সঙ্গে দেখা হত। তাদের ফেরবার আর বড়ো দেরি নেই।”

৫১