এই কথাটুকুর উপরে নির্ভর করিয়া আবার বসিয়া পড়িতে বিনয়ের লজ্জা বোধ হইল। আর-একটু পীড়াপীড়ি করিলে সে বসিতে পারিত; কিন্তু পরেশ অধিক কথা বলিবার বা পীড়াপীড়ি করিবার লোক নহেন, সুতরাং বিদায় লইতে হইল। পরেশ বলিলেন, “আপনি মাঝে মাঝে এলে খুশি হব।”
রাস্তায় বাহির হইয়া বিনয় বাড়ির দিকে ফিরিবার কোনো প্রয়োজন অনুভব করিল না। সেখানে কোনো কাজ নাই। বিনয় কাগজে লিখিয়া থাকে; তাহার ইংরেজি লেখার সকলে খুব তারিফ করে। কিন্তু গত কয়দিন হইতে, লিখিতে বসিলে লেখা মাথায় আসে না। টেবিলের সামনে বেশিক্ষণ বসিয়া থাকাই দায়; মন ছট্ফট করিয়া উঠে। বিনয় তাই আজ বিনা কারণেই উলটা দিকে চলিল।
দু পা যাইতেই একটি বালককণ্ঠের চীৎকারধ্বনি শুনিতে পাইল, “বিনয়বাবু, বিনয়বাবু।”
মুখ তুলিয়া দেখিল, একটি ভাড়াটে গাড়ির দরজার কাছে ঝুঁকিয়া পড়িয়া সতীশ তাহাকে ডাকাডাকি করিতেছে। গাড়ির ভিতরের আসনে খানিকটা শাড়ি, খানিকটা সাদা জামার আস্তিন, যেটুকু দেখা গেল তাহাতে আরোহীটি যে কে তাহা বুঝিতে কোনো সন্দেহ রহিল না।
বাঙালি ভদ্রতার সংস্কার অনুসারে গাড়ির দিকে দৃষ্টি রক্ষা করা বিনয়ের পক্ষে শক্ত হইয়া উঠিল। ইতিমধ্যে সেইখানেই গাড়ি হইতে নামিয়া সতীশ আসিয়া তাহার হাত ধরিল; কহিল, “চলুন, আমাদের বাড়ি।”
বিনয় কহিল, “আমি যে তোমাদের বাড়ি থেকে এখনি আসছি।”
সতীশ। বা, আমরা যে ছিলুম না, আবার চলুন।
সতীশের পীড়াপীড়ি বিনয় অগ্রাহ্য করিতে পারিল না। বন্দীকে লইয়া বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই সতীশ উচ্চস্বরে কহিল, “বাবা, বিনয়বাবুকে এনেছি।”
বৃদ্ধ ঘর হইতে বাহির হইয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “শক্ত হাতে ধরা পড়েছেন, শীঘ্র ছাড়া পাবেন না। সতীশ তোর দিদিকে ডেকে দে।”
৫২