পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আমাদের সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে ভারতবর্ষকে টুকরো টুকরো করে বিদেশী আদর্শের সঙ্গে মিলিয়ে তার প্রতি কেবলই অবিচার করি।”

 সুচরিতা কহিল, “আপনি কি বলেন জাতিভেদটা ভালো।”

 এমনভাবে কহিল যেন ও-সম্বন্ধে কোনো তর্কই চলিতে পারে না।

 বিনয় কহিল, “জাতিভেদটা ভালোও নয়, মন্দও নয়। অর্থাৎ, কোথাও ভালো, কোথাও মন্দ। যদি জিজ্ঞাসা করেন হাত জিনিসটা কি ভালো, আমি বলব, সমস্ত শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে ভালো। যদি বলেন ওড়বার পক্ষে কি ভালো, আমি বলব, না তেমনি ডানা জিনিসটাও ধরবার পক্ষে ভালো নয়।”

 সুচরিতা উত্তেজিত হইয়া কহিল, “আমি ও-সমস্ত কথা বুঝতে পারি নে। আমি জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জাতিভেদ মানেন।”

 আর কারও সঙ্গে তর্ক উঠিলে বিনয় জোর করিয়াই বলিত, ‘হাঁ, মানি।’ আজ তাহার তেমন জোর করিয়া বলিতে বাধিল। ইহা কি তাহার ভীরুতা অথবা ‘জাতিভেদ মানি’ বলিলে কথাটা যতদূর পৌছে আজ তাহার মন ততদূর পর্যন্ত যাইতে স্বীকার করিল না— তাহা নিশ্চয় বলা যায় না। পরেশ পাছে তর্কটা বেশিদূর যায় বলিয়া এইখানেই বাধা দিয়া কহিলেন, “রাধে, তোমার মাকে এবং সকলকে ডেকে আনো— এঁর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।”

 সুচরিতা ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইতেই সতীশ তাহার সঙ্গে বকিতে বকিতে লাফাইতে লাফাইতে চলিয়া গেল।

 কিছুক্ষণ পরে সুচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়া বলিল, “বাবা, মা তোমাদের উপরের বারান্দায় আসতে বললেন।”

উপরে গাড়িবারান্দায় একটা টেবিলে শুভ্র কাপড় পাতা, টেবিল ঘেরিয়া চৌকি সাজানো। রেলিঙের বাহিরে কার্নিসের উপরে ছোটো ছোটো টবে

৫৫