পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ব্যবহারকে মনে মনে নিন্দাই করিল, কিন্তু সে নিন্দার সঙ্গে একটু যেন ঈর্ষার ভাব মিশিতে লাগিল।

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “মনে হচ্ছে, আপনাকে যেন দুই-একবার সমাজে দেখেছি।”

 বিনয়ের মনে হইল, যেন তাহার কী একটা অপরাধ ধরা পড়িল। সে অনাবশ্যক লজ্জা প্রকাশ করিয়া কহিল, “হাঁ, আমি কেশববাবুর বক্তৃতা শুনতে মাঝে মাঝে যাই।”

 বরদাসুন্দরী জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি বুঝি কলেজে পড়ছেন?”

 বিনয় কহিল, “না, এখন আর কলেজে পড়ি নে।”

 বরদা কহিলেন, “আপনি কলেজে কতদূর পর্যন্ত পড়েছেন?”

 বিনয় কহিল, “এম. এ. পাস করেছি।”

 শুনিয়া এই বালকের মতো চেহারা যুবকের প্রতি বরদাসুন্দরীর শ্রদ্ধা হইল। তিনি নিশ্বাস ফেলিয়া পরেশের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আমার মনু যদি থাকত তবে সেও এতদিনে এম. এ. পাস করে বের হত।”

 বরদার প্রথম সন্তান মনোরঞ্জন নয় বছর বয়সে মারা গেছে। যে-কোনো যুবক কোনো বড়ো পাস করিয়াছে বা বড়ো পদ পাইয়াছে, ভালো বই লিখিয়াছে বা কোনো ভালো কাজ করিয়াছে শোনেন, বরদার তখনই মনে হয়, মনু বাঁচিয়া থাকিলে তাহার দ্বারাও ঠিক এইগুলি ঘটিত। যাহা হউক, সে যখন, নাই তখন বর্তমানে জনসমাজে তাঁহার মেয়ে তিনটির গুণপ্রচারই বরদাসুন্দরীর একটা বিশেষ কর্তব্যের মধ্যে ছিল। তাঁহার মেয়েরা যে খুব পড়াশুনা করিতেছে, এ কথা বরদা বিশেষ করিয়া বিনয়কে জানাইলেন। মেম তাঁহার মেয়েদের বুদ্ধি ও গুণপনা সম্বন্ধে কবে কী বলিয়াছিল তাহাও বিনয়ের অগোচর রহিল না। যখন মেয়ে-ইস্কুলে প্রাইজ দিবার সময়ে লেপ্টেনেণ্ট্ গবর্নর এবং তাঁহার স্ত্রী আসিয়াছিলেন, তখন তাঁহাদিগকে তোড়া দিবার জন্য ইস্কুলের সমস্ত মেয়েদের মধ্যে লাবণ্যকেই বিশেষ করিয়া বাছিয়া লওয়া হইয়াছিল— এবং গবর্নরের স্ত্রী লাবণ্যকে উৎসাহজনক কী

৫৯