পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাম্বোজান্বয়জ গৌড়পতি।

 প্রথম ভাগে যে বিপুল বিপ্লবের কথা উল্লিখিত হইয়াছে, শতাধিক বৎসর পূর্ব্বে [১৮০৬ খৃষ্টাব্দে বরেন্দ্রমণ্ডলের অন্তর্গত দিনাজপুর জেলার আমগাছী গ্রামে] আবিষ্কৃত তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের তাম্রশাসনের একটি শ্লোকে তাহা সূচিত থাকিতেও, অক্ষর-বিলোপের অত্যাচারে, অনেক দিন পর্য্যন্ত তাহার সম্পূর্ণ পাঠ উদ্ধৃত হইতে পারে নাই। এই শ্লোকটি নবম নরপাল মহীপালদেবের [বরেন্দ্রমণ্ডলের অন্তর্গত দিনাজপুর জেলার বাণগড়ে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনেও উৎকীর্ণ থাকায়, উত্তরকালে ইহার প্রকৃত পাঠ উদ্ধৃত হইয়াছিল। যথা,—

“हत-सकलविपक्षः सङ्गरे वाहु-दर्पात्
अनधिकृत-विलुप्तं राज्य मासाद्य पित्र्यम्।
निहित-चरणपद्मो भूभृतां मुर्द्ध्नि तस्मात्
अभवदवनिपालः श्रीमहीपालदेव:॥”

 ইহাতে জানিতে পারা গিয়াছিল,—মহীপালদেবের পিতৃরাজ্য “অনধিকারী” কর্ত্তৃক বিলুপ্ত হইয়াছিল, এবং তিনি তাহা পুনরায় বাহুবলে লাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই অনধিকারী কে,—তাহা অপরিজ্ঞাত ছিল।

 সেই অনধিকারীর নাম এখনও অপরিজ্ঞাত রহিয়া গিয়াছে। কিন্তু তিনি ৮৮৮ শকাব্দায় [৯৬৬ খৃষ্টাব্দে] বরেন্দ্রমণ্ডলে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত করিয়া, আপনাকে “কাম্বোজান্বয়জ গৌড়পতি” বলিয়া প্রস্তরস্তম্ভে যে শ্লোক উৎকীর্ণ করাইয়াছিলেন, সেই শ্লোক-সংযুক্ত প্রস্তর-স্তম্ভটি অদ্যাপি বরেন্দ্রমণ্ডলেই [দিনাজপুরাধিপতির উদ্যান মধ্যে] বর্ত্তমান আছে। তাহার সহিত বাঙ্গালীর ইতিহাসের সম্বন্ধ কি, “গৌড়রাজমালায়” তাহা বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যাত হইয়াছে। এইরূপে বাঙ্গালীর ইতিহাসে,—পালরাজবংশের অধিকারকালে,—কাম্বোজান্বয়জ [আগন্তুক] গৌড়পতির সন্ধান-লাভের পর, অনুসন্ধান-সমিতির সুযোগ্য সম্পাদক মহাশয় সেই নবাবিষ্কৃত ঐতিহাসিক সমাচার একটি ইংরাজী প্রবন্ধে লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। তাহা স্বনামখ্যাত সুপণ্ডিত স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সরস্বতী মহাশয়ের কৃপায়] এসিয়াটিক্ সোসাইটীর পত্রিকায় এবং [একটি বাঙ্গালা প্রবন্ধে] ‘সাহিত্য’ পত্রে মুদ্রিত হইয়াছে।

 দ্বিতীয় ভাগে যে প্রজা-বিদ্রোহ উল্লিখিত হইয়াছে, তাহা পাল-রাজবংশের পঞ্চদশ নরপাল কুমারপালের প্রধান মন্ত্রী [কামরূপাধিপতি] বৈদ্যদেবের [কমৌলীতে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনের একটি শ্লোকে সূচিত হইয়াছিল। ভীমকে নিহত করিবার পর, বরেন্দ্রীর [জনকভূর] পুনরুদ্ধার-সাধনের কথা এই শ্লোকে রামপালদেবের প্রধান কীর্ত্তি-কথা বলিয়া উল্লিখিত থাকিতেও, অধ্যাপক ভিনিস্, তাহার ব্যাখ্যাকালে, “জনকভূমিকে” মিথিলা বলিয়া ব্যাখ্যা করায়, বাঙ্গালীর ইতিহাসের এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি তমসাচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। বরেন্দ্রমণ্ডলে এখনও এই

৷৶৹