পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিজয়োৎসব।

করিয়াছিলেন। বিজয়সেনের পৌত্র লক্ষ্মণসেনদেবের [মাধাই নগরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায়,—সেনরাজগণ কর্ণাটক্ষত্রিয়-বংশ অলঙ্কৃত করিয়াছিলেন। বিজয়সেনের পুত্র বল্লালসেনদেবের [কাটোয়ার নিকটে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায়,—রাজ্যলাভের পূর্ব্বে, বিজয়সেনের পিতৃ-পিতামহ রাঢ়দেশকে বিভূষিত করিয়াছিলেন।

 গৌড়রাজমালার লেখক মহাশয় এই সকল প্রমাণের অবতারণা করিয়া, প্রাচীন লিপির “কর্ণাট”-রাজ্য কোথায় ছিল, তাহার পরিচয় প্রদানের জন্য, [বিহ্লনদেবের বিক্রমাঙ্ক-চরিতের এবং কহ্লণের রাজতরঙ্গিণীর উপর নির্ভর করিয়া] কল্যাণের চালুক্য-রাজগণের রাজ্যকেই “কর্ণাট” বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। “কর্ণাটেন্দু” বিক্রমাদিত্য কর্ত্তৃক [১০৪০-১০৭১ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্ত্তী সময়ে] গৌড়-কামরূপ পরাভূত হইবার একটি কাহিনী “বিক্রমাঙ্কদেবচরিতে” উল্লিখিত আছে।

 ইহাকে ঐতিহাসিক প্রমাণ বলিয়া গ্রহণ করিলে,—ইহাকেই কর্ণাট-রাজের সহিত গৌড়-রাজের প্রথম সংঘর্ষ বলিয়া স্বীকার না করিয়া, ইহার পূর্ব্বেও, [গৌড়াধিপ প্রথম মহীপালদেবের শাসন-সময়ে] আর একটি সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়াছিল বলিয়া অনুমান করা যাইতে পারে। সে সংঘর্ষে গৌড়াধিপ মহীপালদেব বিজয়লাভ করিয়াছিলেন; তাঁহার বিজয়োৎসবকে চিরস্মরণীয় করিবার জন্য “চণ্ডকৌশিক” নাটক রচিত ও অভিনীত হইয়াছিল। তাহার “প্রস্তাবনায়” দেখিতে পাওয়া যায়,—

 “अलमति विस्तरेण। आदिष्टोऽस्मि दुष्टामात्य-वुद्धिवागुराऽलङ्घ्य-सिंहरंहसा भ्रूभङ्गलीला-समुद्धृताशेष-कण्टकेन समर-सागरान्तर्भ्रमद्भुजदण्ड-मन्दराकृष्ट-लक्ष्मी-स्वयंवर-प्रणयिना श्रीमहीपालदेवेन। यस्येमां पुराविदः प्रशस्तिगाथा मुदाहरन्ति—

य: संश्रित्य प्रकृतिगहना मार्य्यचाणक्य-नीतिं
जित्वा नन्दान् कुसुमनगरं चन्द्रगुप्तो जिगाय।
कर्णाटत्वं ध्रुवमुपगतानद्य तानेव हन्तुं
दोर्दपाठ्य: स पुन रभवत् श्रीमहोपालदेवः॥”

 নান্দীপাঠ সমাপ্ত হইবার পরেই সূত্রধার বলিতেছেন—থাক্ থাক্, আর [পূর্ব্বরঙ্গের] অতি-বিস্তারের প্রয়োজন নাই। আমরা শ্রীমহীপালদেব-কর্ত্তৃক নাট্যাভিনয়ার্থ আদিষ্ট হইয়াছি। তিনি দুষ্টামাত্যবর্গের বুদ্ধিজালে আবদ্ধ হইবার অযোগ্য অলংখ্য সিংহ-শক্তিসম্পন্ন বলিয়া, ভ্রূভঙ্গলীলায় অশেষ ক্ষুদ্র কণ্টক উদ্ধৃত করিয়া দিয়াছেন। সমর-সাগর হইতে তদীয় মন্দররূপী ভুজদণ্ডের আকর্ষণ-বলে বিজয়-লক্ষ্মী উত্থিত হইয়া, তাঁহাকে স্বয়ংবর-প্রণয়ী করিয়াছে। পুরাবিদ্‌গণ তাঁহার সম্বন্ধে এই প্রশস্তি-গাথা উদ্ধৃত করিয়া থাকেন—

॥৶৹