পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

উপক্রমণিকা।

মর্ম্ম অনুভূত হইতে পারে নাই। অনুসন্ধান-ক্ষেত্রে অগ্রসর হইবামাত্র, ইহার বিবিধ পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে; এবং তাহা বিস্তৃতভাবে “লেখমালায়” আলোচিত হইয়াছে।

 ধোয়ী কবির পবনদূত আবিষ্কৃত ও মুদ্রিত হইবার পর জানিতে পারা গিয়াছিল,—বিজয়পুর নামক রাজধানীতে লক্ষ্মণসেনদেবের অভিষেক-ক্রিয়া সম্পন্ন হইয়াছিল। বল্লালসেন তাঁহার “দানসাগর” গ্রন্থে লিখিয়া গিয়াছেন—তাঁহার পিতা বিজয়সেনদেব “বরেন্দ্রে” প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন, এবং তাঁহার গুরু অনিরুদ্ধ ভট্ট “শ্লাঘ্যে বরেন্দ্রীতলে” জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এই সকল সমাচার অবগত হইয়াও, অনেকে নবদ্বীপকেই “বিজয়পুর” বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন;—বরেন্দ্রের কোন্ নিভৃত প্রদেশে বিজয়সেনদেবের প্রাদুর্ভাব-ক্ষেত্র অগৌরবে লুকাইয়া রহিয়াছে, কেহ তাহার অনুসন্ধান করিবার চেষ্টা করেন নাই। রাজসাহী জেলার [গোদাগাড়ী থানার অন্তর্গত] দেবপাড়া গ্রামে সেন-রাজবংশের প্রথম শিলালিপি আবিষ্কৃত হইবার পরেও, কেহ কখন তাহার প্রাপ্তি-স্থান পরিদর্শন করিবার প্রয়োজন অনুভব করেন নাই। অনুসন্ধান-সমিতি এই স্থান হইতেই অনুসন্ধানকার্য্যের সূত্রপাত করিতে গিয়া, বিজয়নগরের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে, নানা পুরাকীর্ত্তির নিদর্শন সংগৃহীত করিতে সমর্থ হইয়াছেন। তাহার বিস্তৃত বিবরণ চিত্রাদিসহ “বিবরণমালায়” সন্নিবিষ্ট হইয়াছে।

 বিজয়সেনদেব বরেন্দ্রভূমির সকল স্থানে, বা তাহার বাহিরে কোনও স্থানে, অধিকার বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন কি না, এখনও তাহার বিশ্বাসযোগ্য নিদর্শন আবিষ্কৃত হয় নাই। এখন কেবল বরেন্দ্রভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, রাজসাহী জেলার [গোদাগাড়ী থানার অন্তর্গত] বিজয়নগর অঞ্চলেই, বিজয়-রাজার নাম লোকমুখে শ্রবণ করা গিয়াছে; তাঁহার রাজবাটীর ধ্বংসাবশেষের সন্ধানলাভ করা গিয়াছে; এবং তাঁহার স্মৃতি-বিজড়িত বহুসংখ্যক “বিতত তল্ল” কেবল এই অঞ্চলেই দেখিতে পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু তাঁহার পুত্র-পৌত্রের শ্রীবিক্রমপুর-সমাবাসিত-জয়স্কন্ধাবারের কথা, এবং তাঁহার পৌত্রের শ্রীবিক্রমপুরের জয়স্কন্ধাবারে আশ্রয়গ্রহণ করিয়া, [মুসলমান-অভিযানের প্রথম প্রকোপ প্রতিহত করিয়া] পূর্ব্ববঙ্গের স্বাতন্ত্র্যরক্ষার কথা, তাম্রশাসনে এবং মুসলমান-ইতিহাস-লেখকগণের গ্রন্থে উল্লিখিত আছে। তজ্জন্য, বিক্রমপুর-অঞ্চলেও তথ্যানুসন্ধানের প্রয়োজন অনুভূত হইয়াছে। তথায়, [অনুসন্ধান-সমিতির উপদেশে ও উৎসাহে] শ্রীযুক্ত যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত মহাশয়, অশেষ অধ্যবসায়-বলে, অনেক পুরাকীর্ত্তির নিদর্শন সংগৃহীত করিয়াছেন। বিবরণমালায়, শিল্পকলায়, এবং গ্রন্থমালায় তাহার নানা পরিচয় সন্নিবিষ্ট হইয়াছে।

 গৌড়রাজমালায় নরপালগণের শাসনকাল নির্ণয়ের জন্য অধিক আড়ম্বর প্রকাশিত হয় নাই। তাহা এখনও নানা তর্কবিতর্কে আচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে। তথাপি, যে সকল প্রমাণের আলোচনা করিলে, নরপালগণের শাসনকালের আভাস প্রাপ্ত হইবার সম্ভাবনা আছে, তাহার কথা যথাস্থানে আলোচিত হইয়াছে। এই গ্রন্থ সঙ্কলিত হইবার সময়ে, পাল-রাজবংশের শাসনকাল-বিজ্ঞাপক

৸৵৹