পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গৌড়রাজমালা।

“प्राची नृपान् सुबृहतश्च बहुनुदीचः
साम्ना युधा च वशगान् प्रविधाय येन।
नामापरं जगति कान्तमदो दुरापं
राजाधिराज-परमेश्वर इत्युदूढ़म्॥”

 “যিনি [যশোধর্ম্ম] প্রবল পরাক্রান্ত প্রাচ্য এবং বহুসংখ্যক উদীচ্য-নৃপতিগণকে সন্ধি-সূত্রে এবং সংগ্রামে বশীভূত করিয়া, জগতে শ্রুতি-সুখকর এবং দুর্ল্লভ “রাজাধিরাজ পরমেশ্বর, এই দ্বিতীয় নাম ধারণ করিয়াছেন।” পণ্ডিতগণ স্থির করিয়াছেন—“মালবগণস্থিতি” হইতে গণিত অব্দই “বিক্রম-সম্বৎ” নামে পরিচয় লাভ করিয়াছে। সুতরাং এই প্রশস্তিতে প্রাচ্য-নৃপগণের উল্লেখ দেখিয়া বুঝিতে পারা যায়,—৫৮৯ মালব-বিক্রমাব্দের [৫৩৩ খৃষ্টাব্দের] পূর্ব্বেই, যশোধর্ম্ম লৌহিত্য-নদের উপকণ্ঠ হইতে মহেন্দ্র-গিরির উপত্যকা পর্য্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করিয়াছিলেন।


 মহারাজাধিরাজ যশোধর্ম্মের পরলোক গমনের পর, কে যে উত্তরাপথের সার্ব্বভৌম নরপতির পদ লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, অথবা কেহ সমর্থ হইয়াছিলেন কিনা, তাহা বলা কঠিন। খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দের শেষার্দ্ধে, যে সকল নরপাল বিদ্যমান ছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে কেবল মৌখর বা মৌখরি-বংশীয় ঈশানবর্ম্মা এবং তদীয় পুত্র শর্ব্ববর্ম্মাকে “মহারাজাধিরাজ” উপাধিতে ভূষিত দেখিতে পাওয়া যায়।[১] মৌখর-বংশীয় “মহারাজাধিরাজগণের” প্রভাব বাঙ্গালাদেশ পর্য্যন্ত বিস্তার লাভ করিয়াছিল কি না, বলা কঠিন। মগধের অপর গুপ্তবংশীয় কুমারগুপ্তের সহিত ঈশানবর্ম্মার যুদ্ধ চলিয়াছিল।[২] ফরিদপুর জেলায় আবিষ্কৃত চারিখানি তাম্রশাসনে যথাক্রমে ধর্ম্মাদিত্য, গোপচন্দ্র, এবং সমাচারদেব নামক তিন জন “মহারাজাধিরাজ” বা সম্রাটের পরিচয় পাওয়া গিয়াছে।[৩] ষষ্ঠ শতাব্দের শেষভাগে স্থানীশ্বরের [থানেশ্বরের] অধিপতি প্রভাকর-বর্দ্ধন উত্তরাপথের পশ্চিম ভাগে স্বীয় প্রাধান্য স্থাপন এবং “মহারাজাধিরাজ” উপাধি গ্রহণ করিয়াছিলেন। ৬০৫ খৃষ্টাব্দে প্রভাকর-বর্দ্ধন সহসা কালগ্রাসে পতিত হইলে, উত্তরাপথের সার্ব্বভৌম নৃপতির পদ লাভের জন্য ভীষণ সমরানল প্রজ্জ্বলিত হইয়াছিল। প্রভাকর-বর্দ্ধনের জামাতা মৌখরি গ্রহবর্ম্মা পাঞ্চালের রাজধানী কান্যকুব্জের সিংহাসনে অধিরূঢ় ছিলেন। প্রভাকর-বর্দ্ধনের মৃত্যু-সংবাদ প্রচারিত হইবামাত্র, মালব হইতে দেবগুপ্ত (?) সসৈন্য কান্যকুব্জাভিমুখে ধাবিত হইয়াছিলেন।

    সালের Journal of the Royal Asiatic Society পত্রে হর্ণলি এই মতের প্রতিবাদ করিয়াছেন। হর্ণলির যুক্তি সমীচীনতর বোধ হয়।

  1. Fleet’s Gupta Inscriptions. p. 220.
  2. Ibid, р. 202.
  3. Three copper-plate grants from East Bengal (Indian Antiquary, 1910, pp. 193-216); The Kotwalipārā spurious grant of Samacāradeva (Journal and Proceedings of the Asiatic Society of Bengal 1910, p. 435). ডাক্তার হর্ণলি মনে করেন–ধর্ম্মাদিত্য মহারাজাধিরাজ