পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গৌড়ে বৎসরাজ।

 ঢাকা জেলার রায়পুরা থানার অন্তর্গত আশরফপুর নামক গ্রামে প্রাপ্ত দুইখানি তাম্রশাসনে সম্ভবতঃ বঙ্গের এই যুগের রাজকীয় ইতিহাসের কিঞ্চিৎ আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই দুইখানি তাম্রশাসনে এক অভিনব রাজবংশের পরিচয় পাওয়া যায়।[১] সুগতে, তদীয় সংঘে, এবং তদীয় ধর্ম্মে দৃঢ়ভক্তিমান্ “সমগ্র পৃথিবী-বিজেতা [ক্ষিতিরিয়মভিতোনির্জ্জিতা]” শ্রীমৎ খড়্গোদ্যম এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। খড়্গোদ্যমের উত্তরাধিকারী [তদীয় পুত্র] “ক্ষিতিপতি” জাতখড়্গ। জাতখড়্গ সম্বন্ধে প্রশস্তিকার লিখিয়াছেন,—“বায়ু যেমন তৃণকে এবং করী যেমন অশ্ববৃন্দকে বিধ্বস্ত করে, তিনিও সেইরূপ স্বীয় শৌর্য্য-প্রভাবে সমস্ত শত্রুকুল বিধ্বস্ত করিয়াছিলেন।” জাতখড়্গের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী “অশেষক্ষিতিপাল-মৌলিমালা-মণিদ্যোতিত-পাদপীঠ,” “নির্জ্জিত শক্র” শ্রীদেবখড়্গ। দ্বিতীয় তাম্রশাসনে দেবখড়্গের পুত্র রাজরাজের নাম উল্লিখিত হইয়াছে। এই রাজবংশ সম্বন্ধে ইহার অধিক আর কিছুই এযাবৎ জানা যায় নাই।


 যশোবর্ম্মা কর্ত্তৃক “গৌড়বধ” হইতে, গৌড়মণ্ডলের অপরাপর অংশে ক্রমাগত রাষ্ট্রবিপ্লব চলিতে থাকিলেও, খড়্গ-রাজগণের শাসনাধীনে বঙ্গ সম্ভবতঃ শান্তিলাভ করিয়াছিল। কিন্তু ৭৮৪ খৃষ্টাব্দের পরে, আর এক বহিঃশত্রু বাঙ্গালা আক্রমণ করিয়া, বঙ্গের শান্তিভঙ্গ করিয়াছিল, এবং গৌড়ের বিপ্লবানল প্রবলতর করিয়া তুলিয়াছিল। বাঙ্গালার এই নবাগত অতিথি গুর্জ্জরের (বর্ত্তমান রাজপুতনার) প্রতীহার-বংশীয় রাজা বৎসরাজ। জিনসেন প্রণীত জৈন-হরিবংশের উপসংহারে উক্ত হইয়াছে—

“शाकेष्वब्दशतेषु सप्तसु दिशं पंचोत्तरेषूत्तरां
पातींट्रायुधनाम्नि कृष्णनृपजे श्रीवल्लभे दक्षिणां।
पूर्वां श्रीमदवन्तिभूभृति नृपे वत्सराजे परां
सौर्याणामधिमंडलं जययुते वीरे वराहेवति॥”

 “৭০৫ শাক (৭৮৩-৭৮৪ খৃষ্টাব্দে) যখন ইন্দ্রায়ুধ নামক (রাজা) উত্তরদিক্ পালন করিতেছিলেন; কৃষ্ণরাজের পুত্র শ্রীবল্লভ (রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুব) দক্ষিণদিক্ পালন করিতেছিলেন; যখন পূর্ব্ব

    উক্ত গ্রন্থের ১১৪ পৃষ্ঠার ২নং টীকায় বসু মহাশয় ব্রাক্ষণডাঙ্গা নিবাসী ৺ বংশীবিদ্যারত্ন ঘটকের সংগৃহীত কুলপঞ্জিকা হইতে উদ্ধৃত করিয়াছেন,—“भृशूरेण च राज्ञापि श्रीजयन्त सूतेन च। नाम्नापि देशभेदैस्तु राढ़ी बारेन्द्र सात्‌सती॥” এই টীকার টীকায় আবার লিখিয়াছেন, “आदिशूर सूतेन च।” এইরূপ পাঠান্তর লক্ষিত হয়।” অন্য কোন পুস্তকে এই পাঠান্তর লক্ষিত হয়, না একই পুস্তকের টীকায় পাঠান্তর প্রদত্ত হইয়াছে, এ বিষয়ে বসু মহাশয় কিছুই বলেন নাই। জয়ন্ত ঐতিহাসিক ব্যক্তি হইলে, ১১০০ বৎসর পূর্ব্বে জীবিত ছিলেন। আর ৺ বংশীবিদ্যারত্নঘটক ঊনবিংশ শতাব্দীর লোক। বংশীবিদ্যারত্ন কোন্ মূলগ্রন্থ হইতে এই তথ্য সংগ্রহ করিয়াছিলেন, সেই মূলগ্রন্থ কোন্ সময়ে রচিত হইয়াছিল, এবং উহার ঐতিহাসিক মূল্যই বা কত, ইত্যাদি বিষয়ের সম্যক্ বিচার না করিয়া, এত বড় একটা কথা স্বীকার করা যায় না।

  1. Memoirs A. S. B. Vol. I, No. 6.

১৯