পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গৌড়রাজমালা।

 রাজেন্দ্রলাল ও ভাণ্ডারকরের মধ্যে যে যে বিষয়ে মতভেদ উপস্থিত হইয়াছিল, তন্মধ্যে “কুঞ্জরঘটাবর্ষেণ” পদের কথাই উল্লেখযোগ্য। “কুঞ্জর” অর্থে ৮ এবং “কুঞ্জরঘটা” অর্থে ৮৮৮। “কুঞ্জরঘটাবর্ষেণ” পদে [পাণিনির ২।৩।৬ সূত্র অনুসারে] ক্রিয়া-পরিসমাপ্তি-অর্থে কালবাচক শব্দের উত্তর তৃতীয় বিভক্তি হইয়াছে। “কুঞ্জরঘটাবর্ষেণ” পদের ইহাই সহজ অর্থ। ৮৮৮কে শকাব্দ ধরিলে, ৯৬৫-৯৬৬ খৃষ্টাব্দ পাওয়া যায়। এই লিপির অক্ষরের বিচার করিলে, এবং লিপির প্রাপ্তি স্থানের, বা বরেন্দ্রভূমির পূর্ব্বাপর ইতিহাসের আলোচনা করিলেও, ৮৮৮ শকাব্দ, [৯৬৬ খৃষ্টাব্দই] “কাম্বোজান্বয়জ গৌড়পতি”র আবির্ভাব-কাল বলিয়া প্রতীয়মান হয়।

 বরেন্দ্রভূমিতে এ পর্য্যন্ত যে সকল প্রাচীন লিপি পাওয়া গিয়াছে, তন্মধ্যে খালিমপুরে প্রাপ্ত ধর্ম্মপালের তাম্রশাসনের[১] এবং তথাকথিত বাদল-স্তম্ভে উৎকীর্ণ নারায়ণপালের মন্ত্রী গুরবমিশ্রের প্রশস্তির[২] অক্ষরের সহিত এই লিপির অক্ষরের তুলনা করিলে, বাদল-স্তম্ভ-লিপির অক্ষরের সহিত ইহার অক্ষরের যথেষ্ট সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। পক্ষান্তরে, খালিমপুরের তাম্রশাসনের অক্ষরের সহিত এতদুভয় লিপির অক্ষরের অনেক প্রভেদ। খালিমপুরের তাম্রশাসনের অক্ষরের মধ্যে ম, প, ও স-এর মাথায় ফাঁক আছে। এই লক্ষণটি প্রাচীনতর কালের লিপির প, ম ও স-তেও লক্ষিত হয়। কিন্তু বাদল-স্তম্ভলিপির প, ম ও স-এর মত, দিনাজপুর-স্তম্ভলিপির প, ম ও স-এর মাথা মাত্রায় ঢাকা। খালিমপুর-শাসনের অক্ষরের আর একটি লক্ষণ,—ম-এর নীচের দিকের বাম কোণে পুঁটুলি বা বৃত্ত দেখা যায় না; পুঁটুলির স্থানে উপরমুখী একটি টান আছে। কিল্‌হর্ণ লিথিয়াছেন,—“দেবপালের সময়ের ঘোষরাঁবার বৌদ্ধ-লিপিতে কয়েকটিমাত্র ম-এ পুঁটুলি দেখা যায়, কিন্তু বাদল স্তম্ভলিপির ও ভাগলপুরে প্রাপ্ত নারায়ণপালের তাম্রশাসনের সমস্ত ম-ই পুঁটুলিবিশিষ্ট।” সুতরাং নারায়ণপালের সময়ের লিপির অক্ষরের অনুরূপ অক্ষরবিশিষ্ট দিনাজপুরের স্তম্ভলিপিকে দশম শতাব্দীর পূর্ব্বে স্থাপিত করা যাইতে পারে না।

 বাদল-স্তম্ভলিপির ন্যায় এই লিপির অক্ষরের আর একটি লক্ষণ এই যে, ‘রেফ’ সর্ব্বত্রই অক্ষরের মাথার উপর দেওয়া হইয়াছে। প্রথম পংক্তির র্ব্ব, ২য় পংক্তির র্গ্‌গ, এবং ৩য় পংক্তির র্ষ-এর রেফ মাত্রার উপরেই দৃষ্ট হয়। খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দের লিপির মধ্যে দুইখানি লিপি—বাণনগরে প্রাপ্ত প্রথম মহীপালের তাম্রশাসন এবং আমগাছিতে প্রাপ্ত মহীপালের পৌত্র তৃতীয় বিগ্রহ পালের তাম্রশাসন,—দিনাজপুর জেলাতেই আবিষ্কৃত হইয়াছে। এই লিপিদ্বয়ের রেফের ব্যবহার সম্বন্ধে কিল্‌হর্ণ লিখিয়াছেন,—অনেক স্থলে ‘’ রেফ মাত্রার উপরে দেওয়া হয় নাই; যে অক্ষরের সহিত রেফ যুক্ত হইবে, সেই অক্ষরের বাম দিকে মাত্রার সমসূত্রে একটি ক্ষুদ্র রেখামাত্র টানা

  1. Journal of A. S. B. of 1897, Part I, এ খালিমপুরের শাসনের চিত্র দ্রষ্টব্য। অক্ষর-বিচার Epigraphia Indica, Vol. IV, ২৪৩–২৪৪ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।
  2. Epigraphia Indica, Vol, II, p. 160, Plate.

৩৬