রক্ষিগণ খবর পাইয়া প্রস্তুত হইয়াছিলেন। সুতরাং, নিয়ালতিগীন পলায়ন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। ১০৩৩ খৃষ্টাব্দে নিয়ালতিগীনের আক্রমণ হইতে যাঁহারা বারাণসীর উদ্ধারসাধন করিয়াছিলেন, তাঁহারা নয়পালের আদেশানুবর্ত্তী গৌড়-সেনা, নিঃসন্দেহে এরূপ অনুমান করা যাইতে পারে।
তিব্বতীয় ভাষায় রচিত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের (অতীশের) জীবনচরিতে, নয়পালের আমলে, “কর্ণ্য”-রাজ্যের রাজা কর্ত্তৃক মগধ-আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায়।[১] নয়পাল দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে বিক্রমশীলা-বিহারের অধ্যক্ষ নিযুক্ত করিয়াছিলেন। প্রথম যুদ্ধে গৌড়সেনা “কর্ণ্য”-রাজ্যের সেনা কর্ত্তৃক পরাজিত হইয়াছিল, এবং শক্রগণ রাজধানী পর্য্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিল। কিন্তু পরে নয়পালই জয়লাভ করিয়াছিলেন। অবশেষে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের যত্নে, উভয় পক্ষে মৈত্রী স্থাপিত হইয়াছিল। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবন-চরিতকার বুস্তন তাঁহার নিজের শিষ্য ছিলেন। সুতরাং বুস্তনের প্রদত্ত মগধ-আক্রমণ-বিবরণ অবিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু কোন্ রাজ্যকে যে বুস্তন “কর্ণ্য” নামে উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, তাহার নিরূপণ করা কঠিন। “কর্ণ্য”-শব্দ যদি রাজ্যের নাম রূপে গ্রহণ না করিয়া, রাজার নাম বলিয়া মনে করা যায়, তবে এই সমস্যা পূরণ করা যাইতে পারে। চেদির কলচুরি-রাজ গাঙ্গেয়দেবের পুত্র কর্ণ নয়পালের জীবদ্দশায়, [১০৩৭ হইতে ১০৪২ খৃষ্টাব্দ মধ্যে,][১] পিতৃ-সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন। কর্ণের পৌত্রবধু অহ্লনাদেবীর [ভেরঘাটে প্রাপ্ত] শিলালিপিতে উক্ত হইয়াছে, কর্ণের ভয়ে “কলিঙ্গের সহিত বঙ্গ কম্পমান ছিল।”[২] অহ্লনাদেবীর পুত্র জয়সিংহদেবের [কর্ণবলে প্রাপ্ত] শিলালিপিতে সূচিত হইয়াছে—গৌড়াধিপ গর্ব্ব ত্যাগ করিয়া কর্ণের আজ্ঞাবহন করিতেন।[৩] কর্ণ চিরজীবন প্রতিবেশী রাজন্যবর্গের সহিত বিরোধে রত ছিলেন। সুতরাং নয়পালের সময়ে মগধ-আক্রমণ তাঁহার পক্ষে অসম্ভব নহে; এবং সেই আক্রমণের পরিণাম সম্বন্ধে বুস্তন যাহা লিখিয়াছেন, তাহাই হয়ত ঠিক।
বহিঃশত্রুর আক্রমণ সত্বেও, গৌড়াধিপ নয়পাল গৌড়-রাষ্ট্রের মান-মর্য্যাদা-রক্ষায় সমর্থ হইয়াছিলেন। রাজত্বের পঞ্চদশ বর্ষে উৎকীর্ণ, গয়ার কৃষ্ণ-দ্বারকা-মন্দিরের শিলালিপিতে, তিনি “সমস্ত-ভূমণ্ডল-রাজ্য-ভার”-বহনকারী বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন।
নয়পালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী তৃতীয় বিগ্রহপাল, তাঁহার রাজত্বের দ্বাদশ কি ত্রয়োদশ বৎসরে উৎকীর্ণ [আমগাছিতে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে, “শক্রকুল-কালরুদ্র” এবং “বিষ্ণু অপেক্ষাও অধিক সংগ্রাম-চতুর” বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন।[৪] সন্ধ্যাকর নন্দীর “রামচরিতে” তৃতীয় বিগ্রহপালের সংগ্রাম-চতুরতার কথঞ্চিৎ পরিচয় পাওয়া যায়। সন্ধ্যাকর নন্দী লিখিয়াছেন
(১৷৯):—“বিগ্রহ-
৪৫