পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিজয়সেন।

করা যাইতে পারে। এ পর্য্যন্ত আর কোন লেখক এই মত গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া জানি না, এবং কিল্‌হর্ণও তাঁহার মতের অনুকূল যুক্তিগুলি বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করিয়া যাইতে পারেন নাই।

 প্রধানতঃ দুইটি প্রমাণ-বলে, খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দের চতুর্থপাদ বিজয়সেনের অভ্যুদয়কাল বলিয়া নিরূপিত হইয়াছে। বিজয়সেনের দেবপাড়া প্রশস্তিতে (২১ শ্লোক) উক্ত হইয়াছে, তিনি “নান্য” নামক নৃপতিকে কারারুদ্ধ করিয়াছিলেন। নেপালের রাজা জয়প্রতাপমল্লের কাটামুণ্ডুতে প্রাপ্ত ১৬৪৯ খৃষ্টাব্দের [৭৬৯ নেপালী-সম্বতের] শিলালিপিতে উল্লিখিত মিথিলার এবং নেপালের “কার্ণাটক”-বংশীয় রাজগণের বংশ-তালিকায় এক “নান্যদেব” উক্ত বংশের আদিপুরুষরূপে উল্লিখিত হইয়াছেন।[১] জর্ম্মণির প্রাচ্যবিদ্যানুশীলন সমিতির পুস্তকালয়ে রক্ষিত একখানি পুঁথিতে নান্যদেব [১০১৯ শকে ১০৯৭ খৃষ্টাব্দে] বর্ত্তমান ছিলেন বলিয়া প্রমাণ পাওয়া যায়।[২] প্রত্নবিদ্‌গণ দেবপাড়া প্রশস্তির “নান্য” এবং কার্ণাটক-বংশের আদিপুরুষ “নান্যদেব”কে অভিন্ন মনে করিয়া থাকেন।[৩] এই মত গ্রহণ করিলেও, একাদশ শতাব্দের শেষ পাদে বিজয়সেনের রাজত্বকাল নিরূপণ অনাবশ্যক; পরন্তু নান্যদেব দ্বাদশ শতাব্দের দ্বিতীয় পাদ পর্য্যন্ত জীবিত ছিলেন; এবং সেই সময়ে, বিজয়সেনের সহিত তাঁহার বিরোধ উপস্থিত হইয়াছিল, এরূপ মনে করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। কার্ণাটক-বংশীয় নৃপতিগণের বংশ-তালিকা-অনুসারে নেপাল-বিজয়ী হরিসিংহ নান্যদেব হইতে অধস্তন সপ্তম পুরুষ। হরিসিংহের মন্ত্রী চণ্ডেশ্বর ঠকুরের সংগৃহীত “বিবাদ-রত্নাকরের” মঙ্গলাচরণ হইতে জানা যায়, হরিসিংহ ১২৩৯ শকাব্দে [১৩১৭ খৃষ্টাব্দে] জীবিত ছিলেন। সুতরাং, প্রতি পুরুষ গড়ে ২৫ বৎসর হিসাবে, হরিসিংহের ঊর্দ্ধতন সপ্তম পুরুষ নান্যদেব, মোটামুট ১১৫০ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত জীবিত ছিলেন, এরূপ অনুমান করা যাইতে পারে। গৌড়রাষ্ট্রের সেই অধঃপতনের সময়, কর্ণাটক্ষত্রিয়-বংশোদ্ভব বিজয়সেন বরেন্দ্রে যে কার্য্য-সাধনে উদ্যোগী হইয়াছিলেন, অপর একজন কর্ণাট-ক্ষত্রিয়, নান্যদেব, পূর্ব্বাবধিই মিথিলায় সেই কার্য্যেই ব্রতী হইয়াছিলেন। সুতরাং নূতন ব্রতী বিজয়সেনের সহিত পুরাতন ব্রতী নান্যদেবের সংঘর্ষ স্বাভাবিক।

 দ্বিতীয় প্রমাণ লক্ষ্মণ-সম্বৎ। কিল্‌হর্ণ স্থির করিয়াছেন,—১১১৯ খৃষ্টাব্দের অক্‌টোবর মাস হইতে এই সম্বতের গণনা আরম্ভ হইয়াছিল; এবং তিনি দেবপাড়া প্রশস্তির ভূমিকায় মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, লক্ষ্মণসেনের রাজত্বের আরম্ভ হইতে এই সম্বৎ-গণনার আরম্ভ হয়। আবুল ফজলের “আকবর-নামা”-রচনার সময়েও, লক্ষ্মণ-সম্বতের উৎপত্তি সম্বন্ধে এইরূপ কিম্বদন্তী প্রচলিত ছিল।[৪] সুতরাং লক্ষ্মণসেনের পিতামহ বিজয়সেন অবশ্য একাদশ শতাব্দের শেষপাদে রাজত্ব করিয়াছিলেন। কিন্তু বল্লালসেন-রচিত দানসাগর-নামক নিবন্ধে উল্লিখিত হইয়াছে—[৫]

  1. Keilhorn’s List of Northern Inscriptions, Appendix to Epigraphia Indica, Vol V.
  2. Deutsche Morganlandische Gesselschaft.
  3. Epigraphia Indica, Vol. I, p.
  4. Journal of the Asiatic Society of Bengal, 1888, Part I, p. 2.
  5. J. A. S. B., 1896, Part I, p. 23. India office-এর পুস্তকালয়ে যে এক খণ্ড, “দানসাগর” আছে,

৬১