বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখমালা।

(২১)

 সেই শ্রীভৃৎ [ধনাঢ্য] এবং বাগধীশ [সুপণ্ডিত] ব্যক্তিতে একত্র মিলিত হইয়া, পরস্পরের সখ্য-লাভের জন্যই, স্বাভাবিক শত্রুতা পরিত্যাগ করিয়া, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী উভয়েই যেন [একত্র] অবস্থিতি করিতেছেন।

(২২)

 শাস্ত্রানুশীলন-লব্ধ-গভীর-গুণ-সংযুক্ত বাক্যে [তর্কে] তিনি বিদ্বৎ-সভায় প্রতিপক্ষের মদগর্ব্ব[] চূর্ণ করিয়া দিতেন; এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও[] অসীম-বিক্রম-প্রকাশে, অল্পক্ষণের মধ্যেই, শত্রুবর্গের “ভটাভিমান” [যোদ্ধা বলিয়া অভিমান] বিনষ্ট করিয়া দিতেন।

(২৩)

 যে বাক্যের ফল তৎক্ষণাৎ প্রতিভাত হইত না, তিনি সেরূপ [বৃথা] কর্ণ-সুখকর বাক্যের অবতারণা করিতেন না। যেরূপ দান পাইয়া [অভীষ্ট পূর্ণ হইল না বলিয়া] যাচককে অন্য ধনীর নিকট গমন করিতে হয়, তিনি কখনও সেরূপ [কেলি-দানের][] দান-ক্রীড়ার অভিনয় করিতেন না।

(২৪)

 কলিযুগ-বাল্মীকির[] জন্ম-সূচক, অতি রোমাঞ্চোৎপাদক, ধর্ম্মেতিহাস-গ্রন্থ-সমূহে, সেই পুণ্যাত্মা শ্রুতির বিবৃতি [ব্যাখ্যা] করিয়াছিলেন।

(২৫)

 তাঁহার সুর-তরঙ্গিণীর ন্যায় অ-সিন্ধু-গামিনী প্রসন্ন-গম্ভীরা বাণী [জগৎকে] যেমন তৃপ্তিদান করিত, সেইরূপ পবিত্র করিত।[]

  1. এই শ্লোকের “परवादि-मदावलेपः” প্রযোগটি উল্লেখযোগ্য। প্রতিবাদী বা বিরুদ্ধবাদীর নাম “পরবাদী”। “অবলেপ”-শব্দের অর্থ “লেপন” এবং “গর্ব্ব”। এখানে আত্ম-প্রাধান্য-বিজ্ঞাপক গর্ব্ব বুঝাইবার জন্যই “মদাবলেপ” ব্যবহৃত হইয়াছে। এরূপ অর্থে “অবলেপ”-শব্দের ব্যবহারের সুপরিচিত নিদর্শন [মেঘদূতের]

    “दिङ्नागानां पथि परिहरन् स्थूलहस्तावलेपान्।”

  2. ব্রাহ্মণ-মন্ত্রীর যুদ্ধক্ষেত্রে বিক্রম-প্রকাশের এই আখ্যায়িকা কবি-কাহিনী বলিয়া প্রত্যাখ্যাত হইতে পারে না। সেকালে বাঙ্গালা দেশেও যে ইহা সত্য-ঘটনা বলিয়া সুপরিচিত ছিল, তাহা কুমারপালদেবের ব্রাহ্মণ-মন্ত্রী বৈদ্যদেব কর্ত্তৃক [বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনোক্ত] কামরূপ-জয়ের বৃত্তান্ত পাঠ করিলে বুঝিতে পারা যায়।
  3. এই শ্লোকের চতুর্থ চরণের শেষ দুইটি অক্ষর বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। ভট্টগুরব যাঁহার মন্ত্রিত্ব করিতেন, সেই নারায়ণপালদেবও এইরূপ দানশীল ছিলেন বলিয়া, তদীয় [ভাগলপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [১৪শ শ্লোকে], পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
  4. এই শ্লোকে “সূচক”-অর্থে “পিশুন”-শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। অধাপক কিল্‌হর্ণ এই শ্লোকের প্রথম চরণের শেষে একটি (চ) অক্ষর সংযুক্ত করিয়া দিয়াছেন। মূল লিপিতে তাহা না থাকায়, ছন্দোভঙ্গ ঘটিতে পারে মনে করিয়া, অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ এরূপ করিয়া থাকিতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এরূপ স্থলে চরণান্ত অক্ষরটি গুরুবর্ণ-রূপে ধরিয়া লইবার রীতি প্রচলিত থাকায়, ছন্দোভঙ্গের আশঙ্কা উপস্থিত হইতে পারে না।
  5. এই শ্লোকের বিলুপ্ত অক্ষরগুলির মধ্যে উইল্‌কিন্স “ত্রিধা”-শব্দটি পাঠ করিয়া, “flowing in a triple

৮৪