বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখমালা৷

(১০)

 সূর্য্যদেব হইতে যেমন কিরণকোটি-বর্ষী চন্দ্রদেব উৎপন্ন হইয়াছেন,[] তাঁহা হইতেও সেইরূপ রত্নকোটি-বর্ষী বিগ্রহপালদেব জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। নয়নানন্দ-দায়ক সুবিমল কলাময় সেই রাজকুমারের উদয়ে ত্রিভুবনের সন্তাপ বিদূরিত হইয়া গিয়াছিল।

(১১)

 তদীয় অভ্রতুল্য সেনা-গজেন্দ্রগণ [প্রথমে] জলপ্রচুর পূর্ব্বাঞ্চলে স্বচ্ছ সলিল পান করিয়া, তাহার পর [তদনু] মলয়োপত্যকার চন্দন-বনে যথেচ্ছ বিচরণ করিয়া, ঘনীভূত-শীতল-শীকরোৎক্ষেপে[] তরুসমূহের জড়তা সম্পাদন করিয়া, হিমালয়ের কটকদেশ উপভোগ করিয়াছিল।

(১২)

 তাঁহার পুত্র শ্রীমহীপালদেব রণক্ষেত্রে বাহুদর্প-প্রকাশে সকল বিপক্ষপক্ষ নিহত করিয়া, “অনধিকৃত-বিলুপ্ত”[] পিতৃরাজ্যের উদ্ধারসাধন করিয়া, রাজগণের মস্তকে চরণপদ্ম সংস্থাপিত করিয়া, অবনিপাল হইয়াছিলেন।


  1. মহীপালদেবের পিতার কোনরূপ বীরকীর্ত্তির উল্লেখ নাই। তাঁহাকে সূর্য্য হইতে “চন্দ্র”রূপে উদ্ভূত বলিয়া, এবং তজ্জন্য তাঁহাতে “কলাময়”ত্বের আরোপ করিবার সুযোগ পাইয়া, কবি ইঙ্গিতে তাঁহার ভাগ্য-বিপর্য্যয়ের আভাস প্রদান করিয়া থাকিবেন। পরশ্লোকে তাঁহার সেনাগজেন্দ্রগণের [আশ্রয়স্থানাভাবে] নানাস্থানে পরিভ্রমণ করিয়া, শিশির-সংক্ষুব্ধ হিমাচলের অধিত্যকায় আশ্রয়লাভের কথায়, এবং তৎপরবর্ত্তী শ্লোকে মহীপালদেবের “অনধিকৃত-বিলুপ্ত” পিতৃরাজ্য পুনঃ প্রাপ্তির কথায়, দ্বিতীয় বিগ্রহপালদেবের শাসন-সময়েই পাল-সাম্রাজ্যের প্রথম ভাগ্য-বিপর্য্যয়ের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যাইতে পারে।
  2. অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ ভাবার্থের ব্যাখ্যা করিবার জন্য [পাদটীকায়] লিখিয়া গিয়াছেন,—“with the water emitted from their trunks.” “গৌড়ের ইতিহাসে” [১২১ পৃষ্ঠায়] এই শ্লোকটি মহীপালের দিগ্বিজয়-বিজ্ঞাপক বলিয়া উল্লিখিত! ইহাতে বরং মহীপালের [রাজ্যভ্রষ্ট] পিতার নানাস্থানে আশ্রয়লাভের চেষ্টাই সূচিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়।
  3. “অনধিকৃত-বিলুপ্ত”-বিশেষণপদের ব্যাখ্যা করিতে গিয়া, প্রাচ্যবিদ্যা-মহার্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু [সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় এবং বিশ্বকোষে] “অনধিকৃত ও বিলুপ্তরাজ্য” বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন। এই ব্যাখ্যাই “গৌড়ের ইতিহাসে” [১২১ পৃষ্ঠায়] গৃহীত হইয়াছে। এখানে “অনধিকৃত”-শব্দে অনধিকারীকেই বুঝিতে হইবে। অমরকোষে [২।৮।৬] সেইরূপ অর্থই লিখিত আছে। [বসু মহাশয়ের ব্যাখ্যা সম্পাদিত হইবার বহু পূর্ব্বে] অধ্যাপক কিল্‌হর্ণও, এই শ্লোকের ব্যাখ্যায়, সেই সুপরিচিত অর্থের অনুসরণ করিয়া, লিখিয়া গিয়াছেন,—“having obtained his father’s kingdom, which had been snatched away by people, who had no claim to it.” মহীপালদেবের পিতার রাজ্য অথবা [পিত্র্যং রাজ্যং] “বরেন্দ্রভূমি” যে অনধিকারিগণের আক্রমণে একবার হস্তচ্যুত হইয়া, পুনরায় অধিকৃত হইয়াছিল, ইহাতে সেই ঐতিহাসিক তথ্য সুব্যক্ত হইয়া রহিয়াছে। কিন্তু এই শ্লোকের “অনধিকারী”-শব্দে কাহাকে বুঝিতে হইবে, তৎকালে তাহা সুপরিচিত থাকায়, কবি তাহার কোনরূপ আভাস প্রদান করেন নাই। বরেন্দ্রভূমিতে তাহার পরিচয়সূচক প্রমাণ অদ্যাপি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয় নাই। তাহার বিস্তৃত বিবরণ “গৌড়রাজমালায়” দ্রষ্টব্য।

১০০