ইহা গৌড়াধিপ মহীপালদেবের লিপি। তিনি সুপণ্ডিত স্থিরপাল এবং বসন্তপাল নামক ভ্রাতৃদ্বয়কে[১] নিযুক্ত করিয়া, তাঁহাদিগের সাহায্যে, কাশীধামে ও সারনাথে, নানা কীর্ত্তি ও জীর্ণ-সংস্কারলিপি-বিবরণ। সুসম্পন্ন করাইয়াছিলেন বলিয়া এই প্রস্তর-লিপিতে উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়।[২] কিন্তু এতদ্বারা কোন্ কোন্ অট্টালিকা সূচিত হইতেছে, তদ্বিষয়ে এখনও বাদানুবাদের অবসান হয় নাই। এই লিপির সহিত বরেন্দ্র-মণ্ডলের ইতিহাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্ত্তমান থাকায়, অনুসন্ধান-সমিতির সদস্যগণ [১৯১০ খৃষ্টাব্দে] কাশীধাম এবং সারনাথেও তথ্যানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন।
এই প্রস্তরলিপির প্রথম পংক্তিতে “গৌড়াধিপ” মহীপালের আদেশে, কাশীধামে “ঈশানচিত্র-ঘণ্টাদির” শত-কীর্ত্তিরত্ন নির্ম্মিত হইবার, দ্বিতীয় পংক্তিতে “ধর্ম্মরাজিকা ও সাঙ্গ-ধর্ম্মচক্র” সংস্কৃতলিপি-তাৎপর্য্য। হইবার, এবং “অষ্টমহাস্থান-শৈলগন্ধকূটী” পুনরায় নূতন করিয়া নির্ম্মিত হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর প্রথম পাদ, এই সকল কার্য্য-সম্পাদনের কাল বলিয়া, ইহাতে উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। এই সময়ে, [মহীপালদেবের শাসন-কালের একাদশ সংবৎসরে] নালন্দার বিশ্ববিখ্যাত বৌদ্ধ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিদাহ-বিনষ্ট-মন্দিরের জীর্ণোদ্ধার সাধিত হইবার পরিচয় [নালন্দা-লিপিতে] প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। এই যুগে, অন্যান্য স্থানেও, পুরাকীর্ত্তির সংস্কার-কার্য্য প্রবর্ত্তিত হইয়া থাকিতে পারে। তন্মধ্যে শাক্য-বুদ্ধদেবের জন্মস্থানের [লুম্বিনী-বনের] কথা উল্লেখযোগ্য। তথায় রাজাধিরাজ অশোক [তদীয় অভিষেকোত্তর-বিংশতিতম-বর্ষে] তীর্থ ভ্রমণ করিতে আসিয়া, একটি লিপি-সংযুক্ত শিলাস্তম্ভ প্রতিষ্ঠাপিত করাইয়াছিলেন। তাহার অর্দ্ধাংশ [ইউয়ন্ চুয়ঙ্গের ভারত-ভ্রমণকালে] খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে, বজ্রদীর্ণ ও ভূপতিত অবস্থায়, দেখিতে পাওয়া যাইত।[৩] তাহা এক্ষণে ভূগর্ভ-খননে প্রাচীর-বেষ্টিত অবস্থায় [যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিতবৎ] আবিষ্কৃত হইয়াছে। তাহার প্রতি লক্ষ্য করিয়া, ভিন্সেণ্ট স্মিথ্ লিখিয়াছেন,—তাহা খৃষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ-শতাব্দীর কোনও
- ↑ স্থিরপাল এবং বসন্তপাল যে পরস্পরের ভ্রাতা ছিলেন, তাহাতে সংশয় নাই। তাঁহারা বিশ্বকোষে [একাদশ ভাগের ৩১৪ পৃষ্ঠায়] মহীপালদেবের “পুত্র” বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন কেন, তাহার কারণ বুঝিতে পারা যায় না। প্রমাণ স্থলে Archæological Survey Report, Vol. IX, p. 182 উল্লিখিত হইয়াছে। “গৌড়ের ইতিহাসে” [১২৩ পৃষ্ঠায়] ইঁহারা মহীপালদেবের “আত্মীয়” বলিয়া উল্লিখিত। ইঁহাদের সহিত মহীপালদেবের কোন সম্বন্ধ ছিল কি না, এই প্রস্তর-লিপি ভিন্ন, তাহার আর কোনও প্রমাণ এ পর্য্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই। প্রস্তর-লিপির “অনুজ”-শব্দের পুত্র-বাচক অর্থ গ্রহণ করা সমীচীন বলিয়া বোধ হয় না।
- ↑ ডাক্তার হুল্জ্ এই সকল কীর্ত্তির যেরূপ ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন, তাহার অনুসরণ করিয়াই, “গৌড়ের ইতিহাসে” (১২৩ পৃষ্ঠায়] “ঈশান”-শব্দ দীপস্তম্ভ, এবং “চিত্র-ঘণ্টা” কারুকার্য্যময় ঘণ্টা বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে।
- ↑ Near these topes was a stone-pillar set up by Asoka with the figure of a horse on the top. Afterwards the pillar had been broken in the middle, and laid on the ground (that is, half of it) by a thunder-bolt from a malicious dragon.—Watter’s Yuan Chawang, Vol. II, pp. 14-15.
১০৫