বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন।
[কমৌলি-লিপি]
প্রশস্তি-পরিচয়।
১৮৯২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে বারাণসী-ধামের গঙ্গা-বরণা-সঙ্গমস্থলের নিকটবর্ত্তী কমৌলি গ্রামে হলকর্ষণোপলক্ষে ২৫ খানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়। বারাণসীর ম্যাজিষ্ট্রেট ব্রেরেটন্আবিষ্কার-কাহিনী। সাহেব এই সকল তাম্রশাসন প্রাপ্ত হইয়া, কোন কোন শাসনলিপির পরীক্ষা করাইবার জন্য, বারাণসী কলেজের অধ্যক্ষ সুপণ্ডিত ভিনিস্ সাহেবের নিকট প্রেরণ করায়, বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন সুধীসমাজে সুপরিচিত হইবার সূত্রপাত হয়। ইহা কমৌলি গ্রামে আবিষ্কৃত হইয়াছিল বলিয়া, “কমৌলি-লিপি” নামে পরিচিত হইয়াছে।
ভিনিস্ সাহেব এই তাম্রশাসনের পাঠোদ্ধারে ব্যাপৃত হইয়া, প্রতিকৃতি ও অনুবাদ সহ একটি পাঠ ভারতীয় লেখমালায় [Epigraphia Indica Vol. II] মুদ্রিত করিয়াছেন। তাঁহারপাঠোদ্ধার-কাহিনী। উদ্ধৃত পাঠই মূলানুগত পাঠ বলিয়া পরিচিত। যে প্রতিকৃতি প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা অতি সুন্দর। তদবলম্বনে উদ্ধৃত পাঠের পরীক্ষা করিবার অসুবিধা নাই। এই তাম্রশাসন ও কমৌলি গ্রামে প্রাপ্ত অন্যান্য তাম্রশাসন ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসে লক্ষ্ণৌ-যাদুঘরে প্রেরিত হইয়াছে।
পাঠোদ্ধার করিবার পর, ভিনিস্ সাহেবই ব্যাখ্যাকার্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছিলেন। তাঁহার ব্যাখ্যা অধিকাংশ স্থলে মূলানুগত হইলেও, কোন কোন স্থলে মূলানুগত হইতে পারে নাই।ব্যাখ্যা-কাহিনী। তিনি অশেষ অধ্যবসায়বলে পাল-রাজবংশের কালনির্ণয়ের চেষ্টায় যে প্রবন্ধ প্রকাশিত করিয়াছেন, তাহার সকল অংশও বিচারসহ হইতে পারে নাই। বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন কমৌলি গ্রামে আবিষ্কৃত হইলেও, তাহার সহিত আমাদের দেশের সম্পর্কই অধিক। সুতরাং তাহা লেখমালায় সন্নিবিষ্ট হইল।
৯৩৪ × ৭ ইঞ্চ আয়তনের তিন খানি তাম্রফলকে এই শাসনলিপি সংস্কৃত ভাষানিবদ্ধ পদ্যে ও গদ্যে উৎকীর্ণ রহিয়াছে। ফলক তিন খানি একটি চমসের ন্যায় পদার্থ সংবদ্ধ, তাহাতে গণপতিরলিপি-পরিচয়। মূর্ত্তি অঙ্কিত আছে। প্রথম ফলকের এক পৃষ্ঠে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফলকের উভয় পৃষ্ঠে লিপি উৎকীর্ণ রহিয়াছে। অক্ষরগুলি কোনও স্থলেই বিলুপ্ত হয় নাই, সুতরাং পাঠোদ্ধারে অসুবিধা ঘটিবার আশঙ্কা নাই। প্রত্যেক অক্ষর প্রায় ১৪ ইঞ্চ; তাহা দেওপাড়া-প্রস্তরলিপির অক্ষরের অনুরূপ। তাম্রশাসনে রাজমুদ্রা সংযুক্ত করিবার যে শাস্ত্র-শাসন দেখিতে পাওয়া যায়, তদনুসারে গণপতি-মূর্ত্তিকেই রাজমুদ্রারূপে গ্রহণ করিতে হইবে।
১২৭