করিত,[১] কখন বা রাজশক্তির অপব্যবহারে অসহিষ্ণু হইয়া, রাজসিংহাসন আক্রমণ করিত।[২] এরূপ প্রমাণ এই সকল প্রাচীন লিপিতেই প্রচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে। তাহা স্মরণ করিলে মনে হয়,—প্রকৃতিপুঞ্জের চিরসঞ্চিত অধিকারসমূহ স্বীকার করিয়া রাজ্যপালন করিতে হইত বলিয়াই, দানকালে তাহাদের সম্মতি গ্রহণের জন্য রাজাকে “मतमस्तु भवतां” বা তদনুরুপ বাক্যাবলী দানপত্রে উৎকীর্ণ করাইতে হইত।
ভূমি কাহার,—রাজার কি প্রজার,—তাহা লইয়া মানবসমাজে অনেক কলহ বিবাদ হইয়া গিয়াছে। ভারতবর্ষে রাজা ভূমির প্রতিপালক (রক্ষাকর্ত্তা) বলিয়া প্রতিভাত;—রক্ষা করিতেন বলিয়া (প্রতিদানরূপে) উৎপন্ন শস্যের অংশ লাভ করিতেন। শস্য উৎপন্ন হউক বা না হউক, ভূমি অধিকার করিতে হইলেই প্রজাকে নির্দ্দিষ্ট কর প্রদান করিতে হইবে, এরূপ শাসন-নীতি রাজাকেই ভূমির অধিকারী বলিয়া প্রতিপন্ন করে। প্রজা তাহা স্বীকার করিয়া লইয়া, ভূমি কৰ্ষণ করে; তদ্দ্বারা ভূমিতে স্বামিত্ব লাভ করিতে পারে না। এরূপ শাসন-নীতি ভূমির বৰ্গফলের অনুপাতে কর ধার্য্য করিয়া থাকে, তজ্জন্য দানপত্রাদিতেও তাহা উল্লিখিত হয়। পালনরপালগণের তাম্ৰশাসনে ভূমির পরিচয় আছে; চতুঃসীমার উল্লেখ আছে; কিন্তু বৰ্গফলের উল্লেখ নাই। সেকালের রাজস্ব-নীতির প্রকৃতি কিরূপ ছিল, ইহাতে তাহার কিছু আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায় কি না, তাহা চিন্তনীয়।
শাসন এবং সংরক্ষণ কার্য্য কিরূপে সম্পাদিত হইত, তাম্ৰশাসনে তাহার যথেষ্ট পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। রাজা “মহতী দেবতা”, তিনি “নররূপে” অবনীমণ্ডলে অবতীর্ণ হইলেও, সাক্ষাৎ সম্বন্ধে প্রজাপালন করেন না। সে কার্য্য নানাশ্রেণীর রাজপুরুষের সাহায্যে সম্পাদিত হইয়া থাকে। তাঁহাদিগের পদবিজ্ঞাপক-উপাধিগুলি তাম্ৰশাসনে উল্লিখিত থাকায়, তাহা হইতে তাঁহাদিগের রাজকার্য্যের পরিচয় লাভ করা যায়। এই সকল পদবিজ্ঞাপক-উপাধি এখন অপ্রচলিত হইয়া পড়িয়াছে বলিয়া, তাহার ব্যাখ্যা-কার্য্যে লিপ্ত হইয়া, সুধীগণ নানা বিচার-বিতণ্ডার অবতারণা করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন।
মুদ্রাযন্ত্র প্রচলিত হইবার পর বঙ্গাক্ষর কিরূপ আকার ধারণ করিয়াছে, তাহা সকলের নিকটেই সুপরিচিত। বঙ্গাক্ষরের এরূপ আকার চিরদিন প্রচলিত ছিল না। কিরূপে, কতদিনে, বঙ্গাক্ষর তাহার বর্ত্তমান আকার লাভ করিয়াছে, তাহা সকলের নিকট সুপরিচিত হইতে পারে নাই।
- ↑ পালবংশের প্রথম রাজা গোপালদেব এইরূপে রাজা নির্ব্বাচিত হইয়াছিলেন বলিয়া তারানাথ যে জনশ্রুতির উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, গোপালদেবের পুত্র ধর্ম্মপালদেবের [খালিমপুরে আবিষ্কৃত] তাম্ৰশাসনে [চতুর্থ শ্লোকে] তাহা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলিয়াই উল্লিখিত আছে।
- ↑ দ্বিতীয় মহীপালদেবকে সিংহাসনচ্যুত ও নিহত করিবার যে আখ্যায়িকা “রামচরিত” কাব্যে উল্লিখিত আছে, রামপালদেবের কীর্ত্তিকলাপের পরিচয় প্রদানের সময়ে, বৈদ্যদেবের [কমৌলিতে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৪ শ্লোকে] তাহার অভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়।
৭