বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ধর্ম্মপালদেবের তাম্রশাসন।

পাদমূল-সমেত[] [তাহাতে] প্রতিষ্ঠাপিত ভগবন্নন্ন-নারায়ণ[] দেবের পূজোপস্থানাদি কর্ম্মের[] জন্য তত্রত্য হট্টিকা ও তলপাটকসমেত চারিটি গ্রাম আপনি দান করুন।” তদনন্তর আমি, তদীয় বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, তলপাটক ও হট্টিকাসমেত উপরি লিখিত এই চারিটি গ্রাম স্বসীমা পর্য্যন্ত যথোদ্দেশে দশাপচারের[] সহিত, কোন কর ধার্য্য না করিয়া, [অর্থাৎ বিনা করে] সকল উৎপাত দূর করিয়া, “ভূমিচ্ছিদ্র-ন্যায়ানুসারে” চন্দ্র, সূর্য্য ও পৃথিবীর অবস্থানকাল পর্য্যন্ত [নারায়ণ বর্ম্মা যেরূপভাবে প্রার্থনা করিয়াছিলেন] সেইরূপেই প্রতিষ্ঠাপন করিলাম। আপনারা সকলেই ভূমির দানফলগৌরব ও তদপহরণে মহানরকপাতাদি ভয় [স্মরণ করিয়া] এই দান অনুমোদন করিয়া পরিপালন করিবেন। প্রতিবাসী ক্ষেত্রকর সকল [এই রাজ] আজ্ঞা শ্রবণ করিয়া, সমুচিত করপিণ্ডকাদি[] সর্ব্বপ্রকার প্রদেয় বস্তু [পূর্ব্বোক্ত দেবসেবার্থ] প্রদান করুক।

 সগর প্রভৃতি বহু রাজগণ ভূমিদান করিয়া গিয়াছেন; যখন যে রাজা ভূমির অধিপতি হন, তখন তাঁহারই ফল হয়॥১৪॥[]

 ভূমিদানকর্ত্তা ষষ্টিসহস্ৰ বৎসর স্বৰ্গভোগ করেন। দত্তভূমির হরণকারী ও হরণ বিষয়ের অনুমোদনকারী তৎ[পরিমিত]কাল পর্য্যন্ত নরকভোগ করেন॥১৫॥

 যিনি স্বদত্ত অথবা পরদত্ত ভূমি হরণ করেন, তিনি পিতৃগণের সহিত, বিষ্ঠার কৃমি হইয়া, নরকযন্ত্রণা ভোগ করেন॥১৬॥

 লক্ষ্মী ও মনুষ্যজীবন পদ্ম (কমল) পত্রস্থিত জলবিন্দুর ন্যায় চঞ্চল;—ইহা এবং পূর্ব্বোক্ত বাক্য সকল স্মরণ করিয়া, পরকীর্ত্তির বিলোপসাধন করা কোন পুরুষেরই কর্ত্তব্য নহে॥১৭॥

 লক্ষ্মী বিদ্যুতের ন্যায় চঞ্চলা, মনুষ্যশরীর দীপশিখার ন্যায় ক্ষণস্থায়ী, সংসার দুঃখবহুল,

  1. পাদমূলিক-শব্দ পালি সাহিত্যে ভৃত্যকে সূচিত করে, এবং এখানেও পাদমূল-শব্দ সেই অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়।
  2. “নন্ন-নারায়ণ”—শব্দ নন্ননামক কোনও ব্যক্তির নামানুসারে নারায়ণের নাম করণের পরিচয় প্রদান করিতে পারে। এরূপ প্রথা এখনও প্রচলিত আছে। পুরাকালেও যে ইহা প্রচলিত ছিল, তাম্রশাসনাদিতে তাহার উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। Epigraphia Indica, Vol. IV, p. 247, Note 6 দ্রষ্টব্য।
  3. পূজা এবং উপস্থান।
  4. দশাপচার-পাঠ সংশয়হীন বলিয়া বোধ হয় না।
  5. অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ এই অংশের অনুবাদে লিখিয়া গিয়াছেন—
     “Should make over (to the donee) the customary taxes, means of subsistence, and all other kinds of revenue.”
  6. “যাহার যাহার যেমন ভূমিদান, তাহার তাহার তেমনি ফল” বলিয়া প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু সাহিত্যপরিষৎ-পত্রিকায় [১৩০৫ সালের দ্বিতীয় সংখ্যার ১৫৭ পৃষ্ঠায়] ব্যাখ্যা করিয়াছেন কেন, তাহা বোধগম্য হয় না। এরূপ ব্যাখ্যায়, এই শ্লোকটির তাম্রশাসনে উদ্ধৃত হইবার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হইয়া যায়। ভবিষ্যৎ ভূপালবৰ্গ যাহাতে কীর্ত্তিনাশ না করেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই সকল শ্লোক উদ্ধৃত হইয়াছে; এবং প্রথম শ্লোকেই বলা হইয়াছে,—যিনি যখন ভূমির অধিপতি হইবেন, তিনি নিজে দান করেন নাই বলিয়া ইহা যেন নষ্ট না করেন; কারণ যিনিই দান করুন না কেন, যিনি যখন ভূমির অধিপতি থাকেন, তিনিই তখন তাহার পুণ্যফল লাভ করেন।

২৭