এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারায়ণপালদেবের তাম্রশাসন।
বঙ্গানুবাদ।
(১)
যিনি কারুণ্যরত্ন-প্রমুদিতহৃদয়ে[১] মৈত্রীকে প্রিয়তমারূপে ধারণ করিয়াছিলেন, যিনি তত্ত্বজ্ঞান-তরঙ্গিণীর সুবিমল সলিলধারায় অজ্ঞান-পঙ্ক প্রক্ষালিত করিয়াছিলেন, যিনি কামক [কামদেব] অরির [পরাক্রম-সঞ্জাত] আক্রমণ পরাভূত করিয়া, শাশ্বতী শান্তি লাভ করিয়াছিলেন; সেই শ্রীমান্ দশবল লোকনাথের[২] জয় হউক।
এবং[৩]
যিনি করুণারত্নোদ্ভাসিতবক্ষে [প্রজাবর্গের] মিত্রতা[৪] ধারণ করিয়া, সম্যক্-সম্বোধ-প্রদায়িনী জ্ঞানতরঙ্গিণীর[৫] সুবিমল সলিল-ধারায় [লোক-সমাজের] অজ্ঞান-পঙ্ক প্রক্ষালিত করিয়া, [দুর্ব্বলের প্রতি অত্যাচারপরায়ণ স্বেচ্ছাচারী] কাম-কারিগণের[৬] [পরাক্রম-সঞ্জাত মাৎস্য-
- ↑ “मैत्री-करुणामुदितोपेक्षाणां सुखदुःख-पुण्यापुण्यविषयाणां भावनात श्चितप्रसादनम्” এই [পাতঞ্জল-দর্শনোক্ত ১ পাদ ৩৩] সূত্রের পারিভাষিক শব্দগুলি স্মরণীয়।
- ↑ দশবল-শব্দ-সংযুক্ত লোকনাথ-শব্দ এখানে বুদ্ধদেবের নামান্তর বলিয়াই ডাক্তার হুল্জ্ কর্ত্তৃক গৃহীত হইয়াছে। কিন্তু পালনরপালগণের শাসন-সময়ে বরেন্দ্র-মণ্ডলের [মহাযান-সম্প্রদায়ের প্রভাব-ক্ষেত্রে] বুদ্ধদেব অপেক্ষা বোধিসত্ব-লোকনাথই সমধিক প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন। সুতরাং এই শ্লোকে বুদ্ধদেবের কিম্বা লোকনাথের জয় বিঘোষিত হইয়াছে, তাহা চিন্তনীয়।
- ↑ লোকনাথ এবং গোপালদেব তুল্যভাবে প্রশংসিত হইয়াছেন বলিয়া, এই শ্লোকের শ্লিষ্ট প্রয়োগগুলি রচনা-কৌশলের পরিচয় প্রদান করিতেছে।
- ↑ ডাক্তার হুল্জ্ এই শ্লোকের “মৈত্রী”কে গোপালদেবের রাজ্ঞীর নাম বলিয়া অবধারণ করিয়াছেন কেন, তাহা বোধগম্য হয় না।
- ↑ মদনপালদেবের [মনহলি গ্রামে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনেও এই শ্লোকটি উৎকীর্ণ থাকায়, প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্র নাথ বসু মহাশয়, সাহিত্য-পরিষৎপত্রিকায় [১৩০৫ সালের ২য় সংখ্যার ১৫৪ পৃষ্ঠায়] একটি মাত্র অর্থ প্রকটিত করিয়া, “সরিৎ” শব্দের অনুবাদে “সরোবর”-শব্দের ব্যবহার করিয়াছেন কেন, তাহা বোধগম্য হয় না।
- ↑ ডাক্তার হুল্জ্ দুইটি অর্থের সন্ধান প্রাপ্ত হইয়াও, “কামকারি”-শব্দে কিঞ্চিৎ সংশয় প্রকাশ করিয়া লিখিয়া গিয়াছেন,—“In the case of Buddha, Kámakárin probably means Mára”. এখানে “কামকারি”-শব্দ [লোকনাথ পক্ষে] “কামক + অরি” অর্থাৎ “কামরূপ অরিকে”, এবং [গোপালদেব-পক্ষে] “কাম + কারি” অর্থাৎ “স্বেচ্ছাচারিগণকে” সূচিত করিতেছে। সুতরাং “কামকারি”-শব্দের একটি অর্থে [বোধিসত্ব] লোকনাথের “আত্মজয়”,—অন্য অর্থে গোপালদেবের “মাৎস্যন্যায়-নিবারণ” ধ্বনিত হইয়াছে। কামকারিগণের প্রভাব কতদূর প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল, এবং কিরূপে তাহা পরাভূত করিয়া গোপালদেব শান্তি স্থাপিত করিয়াছিলেন, তাহা তারানাথের গ্রন্থে উল্লিখিত আছে। যথা,—“In Orissa, Bengal, and five other provinces of the East, every Kṣatriya, Bráhmana and merchant (Vaiçya) made himself the chief of the districts; but there was no king ruling the whole country. The widow of one of these departed chiefs used to kill every night the person who had been chosen as king, until after several years, Gopála, who had been elected king, managed to free himself, and obtained the kingdom.—Quoted in Cunningham’s Archæological Survey Reports, Vol. XV, p. 148.
৬৩